প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে দিনের পর দিন ফুড কর্পোরেশনের (এফসিআই) গুদাম থেকে রেশন সামগ্রী বেরনো বন্ধ হয়ে আছে। ফলে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রেশন ডিলারদের। রেশন সামগ্রী নিয়ে আসতে হচ্ছে কল্যাণীর গুদাম থেকে। প্রশাসনের তরফে একাধিক বার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। লরি মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও নানা ভাবে চেষ্টা করা হলেও নিজেদের অবস্থান অনড় থাকছেন ধর্মঘটি লরি মালিক ও শ্রমিক থেকে শুরু করে গুদামের শ্রমিকদের একটা বড় অংশ। কবে এই অচলাবস্থা কাটবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হয়েছে সব মহলেই।
কৃষ্ণনগর সংলগ্ন ভাতজাংলা ও কালীরহাটে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার দু’টি গুদাম আছে। রেলের ওয়াগন থেকে রেশনের সামগ্রী লরিতে করে এই গুদামে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে লরিতে করে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের একটা অংশের রেশন ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে সেই সমস্ত সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। এই কাজের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর সংখ্যক লরি ও শ্রমিক। সেই সমস্ত লরি সরবরাহের জন্য একাধিক ট্রান্সপোর্ট সংস্থা আছে। আর লরির মাল তোলা ও নামানোর জন্য এক জন ঠিকাদারের মাধ্যমে শ্রমিক সরবরাহ করা হয়। ওয়াগন থেকে গুদাম পর্যন্ত মাল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হলেও গুদাম থেকে লরিতে করে রেশনের মাল ডিস্ট্রিবিউটর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ এ ক্ষেত্রে ক্ষমতা কার থাকবে, কে গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মাঝেমধ্যেই গন্ডগোল হয় বলে স্থানীয়দের দাবি। এই পরিস্থিতিতে গত ৬ মে লরি মালিক সুরাপ শেখকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতির ভাই আইএনটিটিইউসি নেতা দিলীপ মণ্ডল ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। সুরাপ শেখকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবারের তরফে দিলীপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। শুধু তা-ই নয়, পরের দিন থেকে দিলীপ মণ্ডলকে গ্রেফতারের দাবিতে দুই গুদামের শ্রমিক, লরি মালিক ও শ্রমিকদের একটা বড় অংশ কাজ বন্ধ করে দেয়। তার পর থেকে দুই গুদামে মাল ঢুকলেও বার হচ্ছে না বা ডিস্ট্রিবিউটর পর্যন্ত যাচ্ছে না। সুরাপ শেখের দাবি, “দিলীপদের অত্যাচার মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছে। সাধারণ শ্রমিকেরা পর্যন্ত এ বার রুখে দাঁড়িয়েছে। দিলীপ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তারা কেউ কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। একই অবস্থানে আছেন লরি মালিকেরাও।”
তবে দিলীপের বক্তব্য, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি চাই, পরিবেশ দ্রুত স্বাভাবিক হোক।” নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক ওনার্স অ্যা্সোসিয়েশনের সভাপতি জগদীশ ঘোষ বলছেন, “বিষয়টি প্রশাসন দেখছে। ফলে এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করব না। তবে আমরাও চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।” এফসিআই-এর ঠিকাদার অশোক মণ্ডল বলেন, “আমরা বারবার উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। এ ভাবে বেশি দিন কাজ বন্ধ থাকায় সবারই সমস্যা হচ্ছে।”
সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে রেশন বণ্টনের ক্ষেত্রে। ভাতজাংলা ও কালীরহাট গুদাম থেকে মাল বার করা যাচ্ছে না বলে কল্যাণীর গুদাম থেকে রেশন সামগ্রী নিয়ে আসতে সরকারের বেশি খরচও হচ্ছে। কারণ পরিবহণের জন্য কিলোমিটার পিছু টাকা দেওয়া হয়। যদিও জেলা খাদ্য নিয়ামক বাবলুচন্দ্র ভক্তের বক্তব্য, “আমাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কারণ আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছি।” যদিও পরিবহন খরচ বাবদ অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেন বলছেন, “অতীতে আমরা বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। আলোচনা চলছে।” আর তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের বক্তব্য, “ওটা কেন্দ্রীয় সরকারের গুদাম। রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রই বুঝবে কী ভাবে মাল পরিবহণ হবে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরাও মন্তব্য করার কিছু নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy