Advertisement
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

Coronavirus: পুজো নিয়ে ভাবছেন না কেউ, বিপদে মৃৎশিল্পীরা

প্রতিমা, মণ্ডপ, সাজ, আলোকশিল্পী প্রত্যেকের আশঙ্কা, গত বছর যেটুকু আয়োজন হয়েছিল, এবারে অবস্থা তার চেয়েও খারাপ হতে চলেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১ ০৬:০৪
Share: Save:

পুজোর বাকি আর মেরেকেটে একশো দিন। অন্য বার এই সময়ে পুজোর প্রস্তুতি-পর্ব অনেকখানি এগিয়ে যায় উদ্যোক্তা এবং শিল্পী-কারিগর উভয় তরফেই। কিন্তু অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের অভিঘাতে এবারে কোনও পক্ষই এখনও দুর্গাপুজো নিয়ে ময়দানে নামেনি। বিশেষ করে, উদ্যোক্তারা ভীষণ রকম চুপচাপ। যার ফলে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন কারিগর-শিল্পীরাও।

আগামী সপ্তাহে রথ। মণ্ডপ, প্রতিমা শিল্পী এবং থিমের কারিগরেরা জানাচ্ছেন, অন্য বার রথের দিন থেকে পুজোর কাজ হাতে-কলমে শুরু হয়ে যায়। অথচ, এ বার উদ্যোক্তাদের ভাবনাচিন্তার স্তরেই নেই দুর্গাপুজো। প্রতিমা, মণ্ডপ, সাজ, আলোকশিল্পী প্রত্যেকের আশঙ্কা, গত বছর যেটুকু আয়োজন হয়েছিল, এবারে অবস্থা তার চেয়েও খারাপ হতে চলেছে।

নবদ্বীপের নাড়ুগোপাল দাস এবং তাঁর দুই ছেলে গত বিশ বছর ধরে প্রতিমার সাজের কাজ করছেন। ওঁদের মরসুম শুরু হয় মহারাষ্ট্রের গণেশ চতুর্থী দিয়ে। তার পর শেরাওয়ালি মাতার পুজোর কাজ সেরে দুর্গাপুজো। গোটা মহারাষ্ট্র জুড়ে প্রায় দুশো গণেশ এবং প্রায় সমসংখ্যক শেরাওয়ালি প্রতিমার সাজ যায় তাঁদের নবদ্বীপের কারখানা থেকে। পাশাপাশি, প্রস্তুতি চলে এ রাজ্য এবং ত্রিপুরা মিলিয়ে দুর্গাপূজার কাজের। এ বারে এখনও পর্যন্ত কোনও জায়গা থেকে একটিও কাজের বরাত তাঁরা পাননি।

সাজের কারিগর তরুণ দাস বলেন “অন্য বার চৈত্র মাস থেকে আমাদের সাজের কাজ শুরু হয়। এই সময়ে অর্ডার নেওয়া সম্পূর্ণ হয়ে যায়। ভাদ্র মাসে গণেশ চতুর্থীর পরেই আসে পুজো। আমাদের দম ফেলার সময় থাকে না। জনাকুড়ি কারিগর দিন-রাত খেটে ওই বিপুল পরিমাণ কাজ ঠিক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলত।”

আর এক কারিগর আনন্দ দাস বলেন, “মহারাষ্ট্রে নানা জায়গায় কথা বলেছি। গণেশ চতুর্থীর কোনও কাজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেখানকার সরকার এখনও অনুমতি দেয়নি পুজোর। শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিলেও কী রকম ভাবে পুজো হবে, কেউ বুঝতে পারছে না।”

সারা বছর যাঁরা কাজ করেন, সেই শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে নাম কা ওয়াস্তে সামান্য কিছু কাজ করছেন যদি শেষ বাজারে পুজোর কিছু বরাত আসে।

যদিও পুজো নিয়ে ভাবতেই চাইছেন না উদ্যোক্তারা। নদিয়ার যে সমস্ত জায়গায় বড় বাজেটে দুর্গাপুজো হয় যেমন বাদকুল্লা, চাকদহ, রানাঘাট, নবদ্বীপের সব ক্লাব হাত গুটিয়ে বসে আছেন। যেমন, চাকদহ উত্তর লালপুর ইয়ুথ ক্লাবের পুজো বড় বাজেটের। ক্লাবকর্তা সুকেশ বিশ্বাস এবং টুটু বসু জানান, গত বছরে প্রায় শেষের মুখে আদালতের নির্দেশে পুজোর ধরনটাই বদলে গিয়েছিল। তাই আগে থেকে কিছুই প্রস্তুতি নিচ্ছেন না।

টুটু বলেন, “আমাদের পুজোর বাজেটের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই ইয়াস দুর্গত মানুষদের ত্রাণে গোসাবায় খরচ করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে নিজেরা আলোচনায় ঠিক করেছি, ছোট আকারে পুজো হবে। কেননা, সামনে তৃতীয় ঢেউয়ের কথা যা শুনছি, তাতে পুজো নিয়ে এখনই বড় কিছু ভাবছি না।”

একই অবস্থা মণ্ডপ শিল্পীদের ক্ষেত্রেও। কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন বড় পুজোর মণ্ডপের দায়িত্বে থাকেন চাকদহের অরুণ বিশ্বাস। ডেকরেটর্স সমন্বয় সমিতি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সাংগঠনিক সম্পাদক অরুণবাবু বলেন, “গত বছরে দুর্গাপুজো কেমন ভাবে হবে, তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে আদালতের যে নির্দেশিকা এসেছিল, তাতে বড় বাজেটের আয়োজকেরা বিপদে পড়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবারে এখনও পর্যন্ত কোনও উদ্যোক্তা এগোতে চাইছেন না। বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে বুঝতে পেরেছি দুর্গাপূজা নিয়ে এ বার সামান্যতম ভাবনা নেই। গত বছর যেটুকু কাজ ছিল, এ বারে তা-ও হবে কিনা সন্দেহ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE