Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
লালগোলা মুক্ত কারাগার

পেট চালাতে হবে বন্দিদেরই, কড়া হল রাজ্য

এপ্রিল মাসের পয়লা তারিখ থেকে লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দিদের খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিল কারা দফতর। আচমকা কারা দফতরের এই সিদ্ধান্তে অসহায় হয়ে পড়েছেন মুক্ত সংশোধনাগারের বৃদ্ধ, কাজে অপারগ বন্দিরা। যদিও বন্দিদের ওই দাবি না-মানার ব্যাপারে অনড় কারা দফতর। কারা-কর্তাদের দাবি, যদি কাজ জোগাড় না করতে পারেন, তা হলে ওই বন্দিদের ফের পুরনো জেলেই ফেরত পাঠানো হবে।

অনল আবেদিন
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৬
Share: Save:

এপ্রিল মাসের পয়লা তারিখ থেকে লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দিদের খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিল কারা দফতর। আচমকা কারা দফতরের এই সিদ্ধান্তে অসহায় হয়ে পড়েছেন মুক্ত সংশোধনাগারের বৃদ্ধ, কাজে অপারগ বন্দিরা। যদিও বন্দিদের ওই দাবি না-মানার ব্যাপারে অনড় কারা দফতর। কারা-কর্তাদের দাবি, যদি কাজ জোগাড় না করতে পারেন, তা হলে ওই বন্দিদের ফের পুরনো জেলেই ফেরত পাঠানো হবে।

কারা দফতরের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দিদের প্রথম তিন মাস খাবার এবং অন্য জিনিসপত্র দেওয়ার কথা। তার পরে বন্দিদেরই রোজগার করার নিয়ম। এক কারা-কর্তা বলেন, ‘‘অনেক বন্দিই তিন মাসের পরেও রোজগার করে উঠতে পারেন না। আবার অনেকে বয়সের কারণে কাজ করে উঠতে পারেন না। তাঁদের মানবিকতার খাতিরে খাবার-দাবার দেওয়া হত। কিন্তু তার সুযোগ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেক বন্দিই কাজের চেষ্টা করছেন না। এতে মুক্ত সংশোধনাগারের উদ্দেশ্যই নষ্ট হচ্ছে। সে কারণেই এ বার নতুন করে ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’’ তবে একইসঙ্গে ওই কর্তা জানাচ্ছেন, বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও যাঁদের সত্যিই সামর্থ্য নেই, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করবে কারা কর্তৃপক্ষই।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এত দিন নিয়ম থাকা সত্ত্বেও কেন বন্দিদের খাবার দেওয়া হত? এর মধ্যে জেলে জিনিসপত্র সরবরাহকারীদের চাপ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য কারা দফতরের কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘যদি বন্দিদের খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে বিপুল পরিমাণ জিনিসপত্র সরবরাহের বরাত আর মিলবে না। সে কারণেই তাঁরা বন্দিদের খাবার এবং অন্যান্য জিনিস দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।’’ রাজ্য কারা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা আর মাসখানেক দেখার পরে যাঁরা রোজগারে অপারগ, তাঁদের আবার পুরনো জেলে ফিরিয়ে দেব। তার বদলে নতুন বন্দিদের মুক্ত জেলে আনা হবে।’’

কারা দফতরের এই নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন বন্দিরা। লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি ছেষট্টি বছরের বৃদ্ধ কোচবিহারের নাজিমুদ্দিন মণ্ডল ও পঁয়তাল্লিশ বছরের তড়িত্‌ কুণ্ডু বলেন, “ভবিষ্যতে মুক্তি দেওয়ার প্রত্যাশা জাগিয়ে আমাদের লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারে আনা হয়েছিল। এখন বলছে, তোমরা ফিরে যাও আগের কয়েদখানায়! এর চেয়ে নিষ্ঠুর পরিহাস আর কী-ই বা হতে পারে?” ওই বন্দিরা বলেন, “বয়সের কারণে শারীরিক ভাবে আমরা ১৫ জন খুবই অক্ষম। সংশোধনাগারে বাইরে কেউ আমাদের দিন মজুরের কাজ দেবে না। আমরাও পারব না। নিজের রান্না নিজে করারও আমাদের ক্ষমতা নেই। আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।”

কারা দফতর সূত্রের খবর, লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের দান করা ১০০ বিঘার আমবাগান ও রাজবাড়িতে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম মুক্ত সংশোধনাগার। লালগোলার ওই সংশোধনাগারের ভিতরে রয়েছেন ১০১ জন আবাসিক। লাগোয়া ২০টি কটেজে রয়েছে ২০টি আবাসিক পরিবার। ওই ২০টি পরিবারের ভরণ-পোষণের ভার তাঁদের নিজেদের। যাঁরা সংশোধনগারের মালি, রাধুনি, সাফাই কর্মীর কাজ করেন, তাঁদের মাসিক মজুরি ১০৫০ টাকা। তার অর্ধেক তাঁরা বাড়িতে পাঠান। মুক্তি পাওয়ার সময় তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অর্ধেক টাকা জেল কতৃর্পক্ষের কাছে জমা থাকে। ৬ মাস অন্তর ২ বার ১৫ দিন করে বছরে মোট ৩০ দিন প্যারোলে তাদের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। মৃত্যু ও বিয়ের মতো বিশেষ ঘটনায় বছরে ২ দিন বাড়ি য়াওয়ারও অনুমতি রয়েছে।

কারা কর্তারা জানিয়েছেন, ১০১ জন আবাসিকের এত দিন ভরণ-পোষণের দায় নিয়েছে কারা দফতর। বিগত ২৮ বছরের সেই ধারায় ছেদ পড়ল গত বুধবার। স্থানীয় লালবাগ মহকুমাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে ১০১ জনের মধ্যে যে ১১ জন মালি, সাফাই কর্মী, রাধুনির কাজ করে সরকার থেকে কেবল তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের নিজেদের উর্পাজন থেকে খাবার জোটাতে হবে।”

তবে তাঁরা যাতে খাবার পান, সে জন্য বন্দিদের পক্ষ নিয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)। আপাতত সরকারের এই নির্দেশ মেনে নিলেও এপিডিআর-এর সাহায্যে কারা দফতরের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলা করার কথা ভাবছেন লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দিরা।

(সহ প্রতিবেদন: অত্রি মিত্র)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE