ঝড়ের আশঙ্কায় ঠাঁই সরকারি আশ্রয় শিবিরে। বুধবার শান্তিপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
গত বছরের আমপানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই বছর ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল নদিয়া জেলা প্রশাসন। এক দিকে দুর্যোগের মোকাবিলা, অন্য দিকে কোভিড বিধি মেনে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল প্রশাসনের কাছে। শেষ পর্যন্ত নদিয়ায় ঝড়ের ঝাপট তেমন না লাগলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন কতটা প্রস্তুত তার একটা পরীক্ষা হয়ে গেল। যদিও আশ্রয় শিবিরে মাস্ক পরা বা দূরত্ব বিধি মানার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা গিয়েছে অনেকেরই।
দু’তিন দিন আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকায় প্রচার শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়। যাদের কাঁচা বা দুর্বল বাড়ি, তাদের প্রয়োজনে নিরাপদ আশ্রয় যাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। জেলার ন’টি ফ্লাড শেল্টার ছাড়াও আরও ১৫৬টি আশ্রয় শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর জন্য আগে থেকেই বিভিন্ন স্কুলকে স্যানিটাইজ় করে তৈরি রাখা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার থেকেই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এই সমস্ত শিবিরে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। প্রায় ২৩ হাজার মানুষ এই শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সে দিন তাঁদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়। বুধবার তাঁদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে।
শান্তিপুর ব্লকে ১০টি আশ্রয় শিবিরে শ’পাঁচেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তাঁদের জন্য মুড়ি, বিস্কুট, চানাচুরের মত শুকনো খাবার ছাড়াও এ দিন ভাত, ডাল, তরকারি, সোয়াবিন, খিচুড়ি ইত্যাদির ব্যবস্থা হয়। শিশুদের জন্য দেওয়া হয়েছে বেবি ফুডও। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারেরও ব্যবস্থা ছিল। তবে অনেকেই মাস্কের ব্যবহার ঠিক মত করেননি। শান্তিপুরের বিডিও প্রলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “দূরত্ববিধির কথা ভেবেই বেশি শিবির করা হয়েছে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থাও আছে। খাবার পরিবেশনের সময়েও কোভিড বিধি মানা হচ্ছে।”
কল্যাণী মহকুমারের চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ও কল্যাণী ব্লকের চান্দুরিয়া ২, কাঁচরাপাড়া ও সরাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নদী তীরবর্তী এলাকা থেকেও মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এবং রিলিফ সেন্টারে। কল্যাণী ব্লকের শিমুরালি এবং সগুনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা মাটির ঘর থেকেও অনেক মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কল্যাণীর বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব মিলিয়ে কমপক্ষে দুই হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির কথা ভেবে ৩০টি বিদ্যালয়ে তাঁদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সাত-আটটা স্কুল হলেই হয়ে যেত। ওঁদের মাস্ক, শুকনো খাবার ও বেবি ফুড দেওয়া হয়েছে।”
হরিণঘাটা ব্লকের ৩০টি আশ্রয় শিবিরে ৬৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়ির গবাদি পশু এঁরা কেউ আশ্রয় শিবিরে নিয়ে এসেছেন, আবার কেউ বাড়িতেই গোয়ালঘরে ব্যবস্থা করেছেন। তবে শিবিরে কোভিড বিধি মানেননি অনেকেই। জেলার অনেক জায়গাতেই দেখা গিয়েছে, যাঁরা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা মাস্ক ঠিক মত পড়েননি বা দূরত্ব বিধিও মানছেন না।
এ দিন জেলা জুড়েই, বিশেষত দক্ষিণ অংশে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে, সঙ্গে ছিল বৃষ্টিও। নদী তীরবর্তী এলাকা এবং নদীবাঁধের দিকে নজর রেখেছিল সেচ দফতর। তবে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্তও নদীবাঁধ এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় কোনও সমস্যা ছিল না বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। বিকেল পর্যন্ত ভাগীরথীর জলস্তর ছিল ৪.৬৯ মিটার, যা বিপদসীমার থেকে অনেকটাই নীচে। গাছ ভেঙে বা গাছের ডাল ভেঙে বিপর্যয়ের খবরও মেলেনি। বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতিও কিছু হয়নি। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে বাহিনী ছাড়াও পাঁচটি ক্রেন, ৩৫টি জেসিবি মেশিন, ৬০ টি ইলেকট্রিক করাত তৈরি রাখা হয়েছিল। সে সবের প্রায় কিছুই
কাজে লাগেনি।
ভবিষ্যতে যদি ফের আমপানের মত মারাত্মক ঝড় আসে, তা কী ভাবে সামলাতে হবে তারই একটা মহলা হয়ে গেল হয়ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy