শনিবার পর্যন্ত যা ছিল আড়ালে, সোমবার থেকে তা পোস্টার আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ট্রেনের কামরায়-বাড়ির দেওয়ালে। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল এবং নতুন সভাপতি শঙ্কর সিংহের বিরুদ্ধে দলের একাংশের ক্ষোভ বেআব্রু হয়েছে সেই পোস্টারে।
সেই পোস্টারে শঙ্করবাবুকে ‘কংগ্রেসের বিধায়ক’ এবং ‘তৃণমূল কংগ্রেস ধ্বংসকারী’ বলে সমালোচনা করে লোকসভা ভোটে জেলায় দলের বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাঁকে কেন সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল সেই প্রশ্ন করা হয়েছে খোদ তৃণমূল নেত্রীকে। প্রশ্নকারক এবং বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী হিসাবে পোস্টারের তলায় লেখা হয়েছে ‘প্রকৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীবৃন্দ’-র নাম। এতেই স্পষ্ট যে, জেলায় শাসকদলে ভাঙন তৈরি হয়েছে। এক দল নিজেদের আসল তৃণমূল বলে দাবি করছে এবং শঙ্কর সিংহকে তাঁরা নকল বা ভুয়ো তৃণমূল বলে প্রতিপন্ন করতে চাইছেন। নেতৃত্বের উপর এই অবিশ্বাস এবং কার্যত তাঁকে ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ হিসাবে দেগে দেওয়ার মধ্যে অশনিশঙ্কেত দেখছেন তৃণমূলের অনেকেই। শঙ্কর সিংহ রানাঘাটের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে দলের অন্দরে বিদ্রোহ ক্রমে তীব্র হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কী করে দলকে সংগঠিত করে বিজেপির মোকাবিলা করা যাবে তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কিন্তু শঙ্করবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কারা এই পোস্টার মারছে তা জানতে সাংগঠনিক স্তরে তদন্তও শুরু করেছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু দলের নড়বড়ে, ছত্রভঙ্গ অবস্থায় তা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বছর দু’য়েক আগেই শঙ্কর সিংহ, অরিন্দম ভট্টাচার্য, হাসানুজ্জামান শেখরা কংগ্রেস থেকে তৃণমূল যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী এক দল থেকে অন্য দলে যেতে গেলে পুরনো দলের সদস্য সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ সদস্যকে দলত্যাগ করতে হবে। তা না হলে তাঁরা দল বিরোধী আইনের আওতায় পড়ে যাবেন। তাতে তাঁদের বিধানসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যেতে পারে। সেই কারণেই শঙ্করবাবুরা সরাসির কংগ্রেস ত্যাগ করেননি।
কিন্তু কথা হল, এটা এত দিন সকলেই জানতেন। তার পরেও শঙ্করবাবু দলের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। তা হলে এত দিন কেন তিনি প্রকৃত তৃণমূল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল না? কেন লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর তাঁকে জেলায় দলের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসানোর পরেই এই প্রশ্ন ওঠা শুরু হল?
রানাঘাটের এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, “এত দিন দলের একটা অংশ ক্ষমতা ভোগ করে এসেছে। অনেক নেতাই মৌরসিপাট্টা চালাচ্ছিলেন। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হয়ে শঙ্কর সিংহ চলে আসায় তাঁদের একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সবটাই করেকম্মে খাওয়ার লড়াই। তাঁরাই এটা করছেন। নয়তো দলের এমন দুর্দিনে একসঙ্গে থাকার পরিবর্তে কেউ নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে পোস্টার মারতে পারে না।’’ অনেকেই মনে করছেন, এতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে তৃণমূলের। দল আরও দুর্বল হচ্ছে, সংগঠন ক্ষয়ে যাচ্ছে। এর ফল বিধানসভা ভোটে ভুগতে হতে পারে। আবার কেউ-কেউ মনে করছেন, তৃণমূলের কিছু নেতা বিজেপিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তৃণমূলের অন্দরের বিবাদকে উস্কে দিয়ে তাঁরা দলত্যাগের পক্ষে যুক্তি খাড়া করতে চাইছেন।
যদিও শঙ্করবাবু কোনও বিতর্কের মধ্যে না-গিয়ে বলেছেন, “হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া কোনও কথা নিয়ে মন্তব্য করব না। যাঁরা দলকে সঙ্কটমুক্ত করতে চান তারা প্রকাশ্যে দলের ফোরামে এসে সরাসরি কথা বলুন।’’ তিনি আরও বলেন, “আগে স্পষ্ট হোক কারা এমনকরছেন। তার পর না হয় বলব।” তবে এই ঘটনা যে দল কোনও ভাবেই মেনে নেবে না তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন দলের তরফে নদিয়ার পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হওয়া মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “শঙ্কর সিংহকে সভাপতি করা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত। এটা সকলেই মানতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy