Advertisement
E-Paper

বাঁচুক জলঙ্গি, ফিরুক মাছ

প্রতি শীতে লরি করে মাটি ফেলে নদীর দুই পাড়কে কাছে আনে মানুষ। চলাচলের সুবিধা হয় ঠিকই, নদীটা আরও কিছুটা মরে যায়। 

জলঙ্গি নদী থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলছেন পুরসভার লোকজন। রবিবার কৃষ্ণনগরে।  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

জলঙ্গি নদী থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলছেন পুরসভার লোকজন। রবিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫৯
Share
Save

এক যে ছিল পান্না রঙা নদী। স্থানীয়রা অনেকে ডাকে ‘খড়ে’ বলে। পোশাকি নাম জলঙ্গি। উৎস থেকে মোহনা, ২২০.৫ কিমি দৈর্ঘ্যের কমবেশি ৫০ কিলোমিটারের আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই। কোথাও সেখানে জমিতে মাথা তুলেছে ফসল। তো কোথাও তার বুকের উপর দিয়ে পাকা সড়ক। শীতকাল এলেই আসে আরও কিছুটা অংশ হারানোর ভয়। প্রতি শীতে লরি করে মাটি ফেলে নদীর দুই পাড়কে কাছে আনে মানুষ। চলাচলের সুবিধা হয় ঠিকই, নদীটা আরও কিছুটা মরে যায়।

প্রবীণ মৎস্যজীবী রঞ্জিত বর্মণ বলেন, “জলঙ্গি রোজ একটু একটু করে মরে যাচ্ছে। অত্যাচার চলছে নদীর উপর। আমাদের মতো নদী- নির্ভর মানুষেরাও মরে যাচ্ছি।” স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, এখনও বর্ষার সময়ে নদীতে নেই-নেই করে আড়াই তিন কেজি ওজনের রুই, কাতলা মেলে। এছাড়া পুঁটি, ভেদা, বেলে, বোয়াল, ট্যাংরা, আড়ট্যাংরার মতো মাছ যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। কিন্তু এখন সে সব ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে।

নদীপাড়ের এক বাসিন্দা প্রেমচাঁদ হালদার বলেন, “ছোট থেকে জলঙ্গিতে মাছ ধরে জীবন কাটালাম। বর্ষার সময় বৃষ্টি হলেই দু’ পাশের জমির রাসায়নিক জলে নেমে আসে। অথচ তখনই মাছেদের ডিম দেওয়ার সময়। আগে দিনে গড়ে পাঁচ কেজি মাছ পেতাম। এখন পাঁচশো পেলেই মনে হয়, অনেক।” প্রেমচাঁদ, রঞ্জিত বা সুধীর হালদারের মতো মৎস্যজীবীরা এখন আর জলঙ্গির ওপর ভরসা করেন না। সুধীরবাবু জানান, “আগে নদী পাড়ের গ্রামগুলিতে প্রতি একশো জনের মধ্যে পঞ্চাশ থেকে ষাট জন জলঙ্গিকে কেন্দ্র করে জীবন চালাতেন। এখন সেটা সাত-আট জনে ঠেকেছে।”

জলঙ্গি বাঁচানোর ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে একটি সংগঠন রবিবার কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত একটি সাইকেল র‍্যালি আয়োজন করে। স্বরূপগঞ্জের একটি সংগঠন এদিনের নদী সচেতনতা কর্মসূচি উপলক্ষ্যে এলাকার ছোটদের নিয়ে পথ নাটক করে। কৃষ্ণনগরের সংগঠনের তরফে দীপক রায় বলেন, “মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে। জেলেরা পেশা বদলে শ্রমিক, টোটো চালক, হকার হয়ে যাচ্ছেন।”

স্বরূপগঞ্জের সংগঠনের তরফে সুদীপ দেবনাথ বলেন “আমরা ছোটদের এই আন্দোলনে সামিল করেছি যাতে খুব ছোট থেকে নদীর সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে ওদের।” মায়াপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী এক সংগঠনের তরফে গৌরহরি দাস বলেন, “সরকার নদীর ঘাট লিজ দিয়ে প্রচুর অর্থ উপজন করেন। সেই টাকা দিয়ে নদীর সংস্কার করা হোক। তা হলে বাঁচবে জলঙ্গি।”

Jalangi Poor condition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}