শোকে ভেঙে পড়েছেন নিহত আমোদ আলি বিশ্বাসের স্ত্রী। শুক্রবার হাঁসখালির বড় চুপড়িয়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
বেশ কিছু দিন ধরেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের ভিতরে বিবাদ চলছিল। সম্প্রতি সাংগঠনিক পালাবদলের জেরে তা আরও বেড়ে ওঠে। তারই জেরে আমোদ আলি বিশ্বাস (৫০) খুন হলেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
আমোদের বাড়ি হা্ঁসখালির রামনগর-বড়চুপরিয়া ১ পঞ্চায়েতের বড় চুপড়িয়া এলাকায়। প্রায় গোটা হাঁসখালি ব্লকে গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও এই পঞ্চায়েত ছিল ব্যতিক্রম। বিরোধীদের তেমন অস্তিস্বই খুঁজে পাওয়া যায় না এই এলাকায়। আমোদকে বিরোধীরা খুন করেছে তৃণমূলের তরফেও দাবি করা হয়নি, অন্তত শুক্রবার সারা দিন।
এই রামনগর-বড় চুপরিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান পুজা বিশ্বাসের স্বামী বিপিন সাধুখাঁ আবার হাঁসখালি-২ সাংগঠনিক ব্লকের প্রাক্তন যুব তৃণমূল সভাপতি। এলাকায় তাঁর প্রভাব দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। হাঁসখালি ব্লক সভাপতি শিশির রায় আবার এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তাঁর বাড়িও এই এলাকার ওমরপুরে, যদিও তিনি বর্তমানে বগুলায় থাকেন। তিনি এই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানও বটে।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, শশাঙ্ক বিশ্বাসকে সরিয়ে শিশির রায়কে ব্লক সভাপতি করার পর থেকে তিনি এই পঞ্চায়েত এলাকায় নিজের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। সম্প্রতি অঞ্চল সভাপতি সুবীর বিশ্বাসকে সরিয়ে শিশির-অনুগামী বলে পরিচিত ওমরপুরের ওয়াজনবি দফাদারকে সেই পদে আনা হয়। দলের অনেকেই মনে করছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিপিনদের কোণঠাসা করতে অঞ্চল স্তরে এই রদবদল। ফলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইওশুরু হয়।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, আমোদ আগে বগুলার এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বেশ কিছু দিন আগে নানা কারণে আমোদ তাঁর থেকে সরে এসে বিপিনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। আমোদ প্রভাবশালী ও ডাকাবুকো হওয়ায় বড়চুপরিয়া ও আশপাশের এলাকায় বিরোধী গোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা করতে পারছিল না। বড় চুপরিয়া বড় গ্রাম। সেখানে চার জন সদস্য। পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে থাকবে তা অনেকটাই এই গ্রাম ঠিক করে। ফলে এই গ্রামের নিয়ন্ত্রণ রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ সব পক্ষের কাছেই।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই খুনের পিছনে যে তৃণমূল সদস্যের হাত রয়েছে বলে পরিবার সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, তিনি বিপিনের বিরোধী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিপিন শিবিরকে দুর্বল করতে আমোদকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া রাস্তা ছিল না। এ দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বিপিন বলেন, “আমোদ শুধু অঞ্চলের সহ-সভাপতিই ছিলেন না, তিনি একজন দক্ষ সংগঠকও ছিলেন। আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেল।” তিনি স্পষ্টই বলেন, “আমার মনে হয় না বিরোধীরা ওঁকে খুন করেছে। পুলিশ যেন কাউকে আড়াল না করে প্রকৃত সত্যটাই তুলে ধরে।” কী সেই প্রকৃত সত্য? বিপিন বলেন, “যা বলার, সময় হলে ঠিক বলব।”
ব্লক সভাপতি শিশির রায় অবশ্য এই ঘটনায় রাজনৈতিক যোগ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “আমোদ আলি বিশ্বাস নানা সমাজবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই ধরণের লোকরা সমাজবিরোধীদের হাতেই খুন হয়। সে আমাদের দলের কোনও পদে ছিল না বলেই আমি জানি।” দলের কেউ এই খুনের সঙ্গে জড়িত নয় বলেও তিনি বার বার দাবি করেন। সদ্য অঞ্চল সভাপতি হওয়া ওয়াজনবি দফাদারের দাবি, “আমাদের নিজেদের মধ্যে এমন অশান্তি বা গন্ডগোল নেই যে তার জন্য খুনোখুনি করতে হবে।”
তবে রানাঘাট উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অসীম বিশ্বাসের দাবি, “তৃণমূল নেতারা যা-ই বলুন, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে যে এলাকা দখল নিয়ে ওদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের কারণেই খুন হয়েছেন ওই ব্যক্তি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy