বিয়েবাড়িতে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
নাবালিকা বিয়ে বন্ধে মানুষকে সচেতন করা তাঁরই দায়িত্ব। অথচ শনিবার সেই পঞ্চায়েত প্রধানেরই ১৬ বছরের নাবালিকা মেয়ের বিয়ের এলাহি আয়োজন দেখে হতবাক প্রশাসনের কর্তারা। শাসক দলের ছোট বড় নেতারা ছাড়াও খোদ বিধায়ক হাজির ছিলেন সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে। শনিবার কন্যাশ্রী দিবসে ফরাক্কার মমরেজপুরে মহাদেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শাসক দলের প্রধান রেক্সোনা বিবির নাবালিকা মেয়ের বিয়ে তবু কড়া হাতে রুখে দিল প্রশাসন ও পুলিশ।
চার চারটি গাড়িতে করে জনা ৪০ বরযাত্রী নিয়ে আগেই বিয়ে বাড়িতে পা রেখেছেন পাত্র। বাড়ির পাশেই প্যান্ডেলে নিমন্ত্রিতদের গিজ গিজে ভিড়ে উধাও করোনার বিধিনিষেধ। পাশেই বিশাল প্যান্ডেলে খাওয়া দাওয়ার জন্য তৃতীয় ব্যাচ সবে আসনে বসেছে। ঠিক তখনই শনিবার বেলা ৩টে নাগাদ বিয়ে বাড়ির সামনে ব্লক অফিসের গাড়িটা থামতেই নিমেষেই থমকে পড়েছে সব কিছু। সঙ্গে পুলিশ দেখে খাবারের চেয়ার ছেড়ে ততক্ষণে উঠে পড়েন প্রায় সকলেই।
এ দিন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বছর ১৬ বয়সের নাবালিকা মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল সকাল থেকেই। আশপাশের প্রতিবেশীরাও হাজির হন অনুষ্ঠানে। স্বেচ্ছাসেবী কর্মী রবিউল ইসলাম বলছেন, “চারিদিকে খুশি ও হুল্লোড়। তার মাঝেই সদলবলে প্রশাসনিক কর্তাদের পুলিশ নিয়ে হাজির হতে দেখে নিমেষেই উধাও বিয়ের আনন্দ।” “দেখিতো কার বিয়ে?” বলে পুলিশ এগোতেই বিয়ে বাড়ির ভিড় পাতলা হতে শুরু করেছে ততক্ষণে। বর ও বরযাত্রীরা তখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ব্যাপারটা কী? গায়ে হলুদ মেখে পাত্রী স্বয়ং তখন হাজির পুলিশ কর্তার সামনে। ছুটে আসেন পাত্রীর মা পঞ্চায়েত প্রধান ও তার স্বামীও। পাত্রী এবারই মাধ্যমিক পাশ করেছে। আধার কার্ডের হিসেবে জন্ম ২০০৫ সাল। “আরে, এতো সবে ১৬ বছর। বন্ধ করতে হবে এ বিয়ে। ১৮ বছরের নীচে বিয়ে দেওয়া যাবে না এ মেয়ের।” ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে জানিয়ে দিলেন সঙ্গের পুলিশ অফিসার।
কিন্তু মায়ের কথা “বিয়ে তো শুরু হয়ে গেছে স্যার। বর বাড়িতে এসে গিয়েছে। এত রান্না বান্না। এখন বিয়ে বন্ধ করব কী করে?” বাবা শেখ আব্দুল বারিককে ততক্ষণে বোঝাতে শুরু করেছেন কন্যাশ্রী প্রকল্পের ব্লক আধিকারিক শ্যামল সরকার, “আপনি পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী। প্রধান মহাদেবনগর পঞ্চায়েতের ১৭টি গ্রামের মাথা। আপনি যেখানে নাবালিকা বিয়ে বন্ধে সচেতন করবেন, সেখানে আপনি আপনার নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন? তাহলে আর সাধারণ মানুষকে কী বোঝাব?” প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলল বোঝানোর পালা। মা, বাবাও ততক্ষণে বুঝেছেন বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। বাধ্য হয়েই লিখে দিলেন মুচলেকা। বন্ধ হল বিয়ে। বরযাত্রী নিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে ততক্ষণে তোফাপুরে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন বরও।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ফরাক্কার ভারপ্রাপ্ত বিডিও সন্দীপন প্রামাণিক। বলছেন, “কোনও পঞ্চায়েত প্রধান এ কাজ করতে পারেন ভাবতেই পারিনি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আইনের চোখেও অপরাধ। সকালেই খবর পেয়ে পুলিশ দিয়ে কর্মীদের পাঠানো হয়েছিল। ওরা কড়া হাতে বিয়েটা বন্ধ করেছে এটাই খুশির খবর। একটা দৃষ্টান্তও বটে। ”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy