কয়েক দিন আগে থেকেই পরীক্ষার পড়া করছেন বিভিন্ন দফতরের আমলা-আধিকারিকেরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন আজ, বৃহস্পতিবার।
বুধবার সারা দিনই তাই নদিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনের প্রায় প্রতিটি ঘরে লেগে রইল চরম ব্যস্ততা। টেবিলে টেবিলে ফাইল ডাঁই। তার ভিতর মুখ গুঁজে কর্তারা। প্রতিটি দফতরে কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ আটকে কর্মীদের। মুহূর্তে মুহূর্তে তথ্য চেয়ে পাঠাচ্ছেন অফিসারেরা। এরই ফাঁকে নিজের চেয়ারে এলিয়ে বসে এক কর্তা মিটমিট করে হাসেন— “আর যাই হোক, বেশি টাকা লাগে এমন কাজের কথা বলা যাবে না। অন্য জেলার বৈঠকগুলো তো দেখছি!”
বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে মুখ্যমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে প্রকাশ্যেই বকুনি খেতে হয় প্রায় সর্বস্তরের আধিকারিকদের। কার কপালে যে তা লেখা আছে, আগে থেকে অনুমান করা যায় না। ফলে প্রায় সকলেই এক প্রকার সিঁটিয়ে রয়েছেন। এই বুঝি মুখ্যমন্ত্রী ‘পড়া ধরে’ বসেন। হাতের কাছে সমস্ত তথ্য মজুত রাখতে হচ্ছে। এ বারে আবার বেশি চাপে আছেন পুলিশ আর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। কারণ দিন কয়েক আগে হাঁসখালিতে দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর পর জেলার পথ নিরাপত্তা বা ট্রাফিক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীও সেই একই প্রশ্ন তুলতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশেষ করে যেখানে ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলেই শোকজ্ঞাপন করেছিলেন। ফলে এই বিষয়টি যে তাঁর মাথায় থাকবে তা সহজেই অনুমেয়। এবং শুধু পুলিশ নয়, স্বাস্থ্যকর্তারাও তোর তোপের মুখে পড়তে পারেন বলে অনেকেই আশঙ্কার করছেন।
দুর্ঘটনার রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন উঠেছে এনআরএস হাসপাতালে রোগী ‘রেফার’ করা নিয়েও। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যভবন থেকে জেলার কাছে বিস্তারিত রিপোর্টও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিকাঠামো গড়া ও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলার অগ্রগতি অনেকটাই সন্তোষজনক হলেও দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা কেউই স্বস্তিতে নেই। বিশেষত যেখানে স্বাস্থ্য ও পুলিশ দু’টি দফতরই মুখ্যমন্ত্রীর নিজের হাতে রয়েছে।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার আক্ষেপ, “সারা বছর করোনার মধ্যেও আমরা জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করলাম। কাজের বিচারে আমরা অন্য অনেক জেলার চেয়ে ভাল করেছি। শুধু ওই দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্যই এখন গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে।”
বহু রাস্তাঘাটের যা হাল তাতে পূর্ত দফতরও তোপের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন ওই দফতরেরই অনেক কর্মী। বেশ কিছু সম্প্রসারণের কাজ সময় মতো শেষ না হওয়াও মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক, কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়কের জন্য অনেক আগেই টাকা বরাদ্দ হয়েছে অথচ এই রাস্তাগুলি সংস্কারের ক্ষেত্রে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
বিএসএফ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন বা নির্দেশ দেন তা শোনার অপেক্ষায় আছেন অনেকেই। কারণ বিএসএফের টহল দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করে দেওয়ায় গোটা জেলাই বিএসএফের টহলের আওতার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে তাদের খিটিমিটি লেগে যাওয়ার সম্ভবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নদিয়ার মতো একটি সীমান্ত জেলায় বিএসএফ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক আয়োজনের ব্যস্ততার ফাঁকেই জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সামাজিক প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু যথেষ্ট ভাল জায়গায় আছি। এখন দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy