আমজাদ শেখের (ইনসেটে) বাড়িতে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
গ্রামে ঢোকার মুখে বুক সমান উঁচু স্পিডব্রেকার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন খান দশেক উর্দিধারী।
আমজাদ শেখের ফুঁ দেওয়া দই’য়ের ভরসায় সেই রেজিনগর থেকে এসে পুলিশের ‘নাকা’য় থমকে গিয়েছেন আসেদা বিবি। বলছেন, ‘‘এক বার চেষ্টা করে দেখি না বাবা, দাও না যেতি, নাতিটা সেরে উঠতেও তো পারে, ওর যে মাথার ব্যামো!’’
লাইনটা এ দিনও হয়ত লম্বাই হয়ে উঠত, গিয়ে হয়ত ঠেকত সেই পিচ রাস্তায়। পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ‘না’। বুজরুকির এখানেই ইতি। তবে তা শুনে আর তর্ক বাড়াননি হরিহরপাড়া বাজারের একখানা সেলাইকল নিয়ে দিনভর বসে থাকা দর্জি আমজাদ শেখ। পরিবার নিয়ে আপাতত গ্রাম ছেড়েছেন তিনি।
পেট থেকে মাথা, মায় ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে নিয়েও আমজাদের ফুঁ দেওয়া দইপড়া নিতে ভিড়টা হচ্ছিল গত দেড় মাস ধরে। নদী-নালা, বাস রাস্তা উপচে ভিড়টা বিকেল চারটে থেকে রাত সাড়ে দশটা-তক একইরকম গমগমে করে রাখত নিশ্চুপ গ্রামটাকে। ভিড় উপচে পৌঁছে যেত খলিদাবাদ গ্রাম ছাড়িয়ে পিচ রাস্তায়। কোন ভরসায়? কেউ জানে না। সকলেরই জন্মেছিল বিশ্বাস, আমজাদের দই-পড়ায় সেরে যাবে সব। আসিদার মতোই অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে খলিদাবাদে আসা লাইনটা গত দেড় মাস ধরে ক্রমাগতই দীর্ঘ হচ্ছিল। সেই লাইনে রানিনগরের কাজেম আলি, ইসলামপুরের মকবুল শেখ কিংবা রঘুনাথগঞ্জের ক্যানসার আক্রান্ত সিতাব মণ্ডল— দেখা মিলেছিল সকলেরই। কিন্তু রোগ কি সেরেছে কারও? উত্তর মেলেনি।
সংস্কারের সেই ভিড়ের বহরের খবর প্রশাসনের কানে যে পৌঁছয়নি এমন নয়। বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরাও বার বারই কড়া নেড়েছেন বিডিও-র দরজায়। কিন্তু বন্ধ করার বদলে স্থানীয় প্রশাসন থেকে ভিড় সামাল দিতে বরং পাঠানো হয়েছিল খান পাঁচেক সিভিক ভলান্টিয়ার।
সোমবার সেই ‘বুজরুকি’ বন্ধে শেষতক নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। জেলার শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশ পেয়ে, সোমবার রাতে খলিলাবাদ গ্রামে সটান আমজাদ শেখের বাড়িতে গিয়ে হরিহরপাড়ার ওসি জানিয়ে দেন— ‘এ বার বন্ধ করতে হবে বুজরুকি!’ বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘এ সবই বুজরুকি। রাস্তায় ভিড় বাড়ছে, যানজট বাড়ছে। যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বন্ধ করে দেওয়া হল।’’ তা হলে দেড় মাস ধরে তা চলতেই বা দেওয়া হল কেন? তার কোনও জবাব অবশ্য মেলেনি। তবে, জেলা ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস মনে করেন, ‘‘মানুষকে নিতান্তই বোকা বানানো হচ্ছিল। এই বুজরুকি আরও আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল প্রশাসনের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy