নবদ্বীপের বহু বৈষ্ণব মন্দিরে ভগবানকে নিয়ে এ ভাবেই পিকনিকে মাতেন ভক্তের দল।
শহর থেকে দূরের বাগান ঘেরা পিকনিক স্পট। শতখানেক লোকের বনভোজনের আয়োজন চমকপ্রদ। গরম বালিতে ভাজা হাতেগরম মুড়ির সঙ্গে গরমাগরম বেগুনি। সঙ্গে কফি। তবে দুপুরের ভোজে সাদা ভাতের সঙ্গে বেতো শাক, সোনামুগ ডাল, আলুর চিপস্, ফুলকপির বড়া, এঁচোড়ের রসা, পোস্ত পনির, টম্যাটো-আমসত্ত্ব-খেজুরের চাটনি, পাঁপড় ভাজা আর রাজভোগ। খাওয়াদাওয়ার ফাঁকে গানের আসর, মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে গল্প। যে কোনও পিকনিকের এটাই মোটামুটি পরিচিত ছবি।
কিন্তু যদি বলা হয় এই পিকনিক আদতে দেবতার, তা হলে একটু চমক লাগে বইকি! প্রতি বছর শীতে নবদ্বীপের বহু বৈষ্ণব মন্দিরে ভগবানকে নিয়ে এ ভাবেই পিকনিকে মাতেন ভক্তের দল। কোনও মন্দিরের বাগানে, কখনও আবার কোনও একটি মন্দিরে জড়ো হয় বিভিন্ন মন্দির বা ভক্তের গৃহদেবতা।
বাকিটা খুব চেনা। সকালের জলখাবার হোক বা দুপুরের খাওয়া কিংবা খরচের হিসাব করে চাঁদা তোলা, সবেতেই পিকনিকের মেজাজ ষোলো আনা। রান্না খাওয়ার ফাঁকে দিনভর কীর্তন। সেই আসরে কখনও নরোত্তম দাস বা নরহরি ঠাকুরের পদ ভেসে বেড়ায়। শীতের দুপুরটা কেমন মেদুর হয়ে ওঠে। বনভোজনের জন্য মাথাপিছু এক দেড়শো টাকাও ধার্য হয়।
কিন্ত দেবতা কি বনভোজন করতে পারেন? ভক্তেরা বলছেন, নিশ্চয়ই পারেন। তাঁরা রীতিমতো কাগজকলমে প্রমাণও দিচ্ছেন বনভোজনে অংশ নিতেন শ্রীকৃষ্ণ নিজেই। ‘তিষ্ঠন্মধ্যে স্বপরি সুহৃদো হাসয়ন্নন্মর্ভতিঃ স্বৈ, স্বর্গে লোকে মিষতি বুভুজে যজ্ঞভুগ্বালকেলিঃ’— শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের ত্রয়োদশ অধ্যায়ের ওই শ্লোকের তর্জমা করলে দাঁড়ায়, দেবতারা তাঁকে লক্ষ করছেন জেনেও শ্রীকৃষ্ণ নিজের চার দিকে বসে থাকা সখাদের নিয়ে পরিহাস করতে করতে ভোজন করতে লাগলেন। বৈষ্ণবদের অন্যতম প্রধান গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবতের ওই অধ্যায়ে বৃন্দাবনে সখাদের সঙ্গে বনে গোরু চরাতে গিয়ে কিশোর শ্রীকৃষ্ণ কী ভাবে গাছের পাতা বা পাথরের টুকরো দিয়ে খাবার পাত্র দিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন জনের বাড়ি থেকে আনা দুধ, দই বা অন্ন ভাগ করে সকলে মিলে খেতেন, তাঁর চমৎকার বর্ণনা রয়েছে।
সেই বনভোজনের প্রথা এখনও রয়েছে গুপ্ত বৃন্দাবন নবদ্বীপে। নবদ্বীপের অন্যতম প্রাচীন হরিসভা মন্দিরের নাটুয়া গৌর যেমন বনভোজনে যান বর্ধমান শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দিরে। কথিত আছে, চৈতন্যদেব নবদ্বীপ থেকে বেশ কয়েক ক্রোশ দূরে যখন বিদ্যানগরে গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলে পড়তে যেতেন, তখন পথের মাঝখানে ওইখানে বিশ্রাম করতেন। ওখানে ছিল চৈতন্যপার্ষদ সারঙ্গমুরারি দেবের জন্মভিটা। মন্দিরে পূজিত গোপীনাথ সারঙ্গমুরারী প্রতিষ্ঠিত। আছে চমৎকার বাগান।
প্রতি শীতেই গোপালদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন হয় নবদ্বীপের শ্যামসুন্দর মন্দিরে। ঘুগনি, মুড়ি, মিষ্টির সঙ্গে অফুরন্ত চা। দুপুরে পঞ্চব্যঞ্জনে নতুন আলুর দম কিংবা জমি থেকে সদ্য তুলে আনা বেগুন ভাজা বা নলেন গুড়ের পায়েস কিছুই বাদ যায় না। দূরের অনেকেই নিজদের বিগ্রহ নিয়ে আগের রাতে চলে আসেন। কেউ আবার দিনের দিন এসে রাতে থেকেও যান মন্দিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy