প্রতীকী ছবি।
যখন যেমন, তখন তেমন!
কখনও শিশু, কখনও মহিলা কখনও আবার প্রতিবন্ধী। সীমান্তের হালচাল বুঝে পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয় ওদের। তবে সব সময় শেষরক্ষা হয় না। দিনকয়েক আগে পাচারের অভিযোগে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক যুবককে গোধনপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে রানিনগর থানার পুলিশ। সাহিন শেখ নামে ধৃতের ব্যাগ থেকে ২০০ বোতল কাশির সিরাপ উদ্ধার হয়েছে।
শাহিনের আরও এক প্রতিবন্ধী ভাই সোনি শেখও এর আগে সমশেরগঞ্জ থানায় মাদক পাচারের অভিযোগে ধরা পড়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রতিবন্ধী শাহিনকে দেখে তাঁদের প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে তার ব্যাগ তল্লাশি করে ভুল ভাঙে।
পুলিশের ওই কর্তা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে কোনও প্রতিবন্ধীকে দেখলেই প্রথমেই একটা সহানুভূতি জাগে। সে যে কোনও পাচার বা বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক ভাবে তা মনেই হয় না। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চায় পাচারকারীরা। তবে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় পাচারে প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগানো এই প্রথম নয়। এর আগেও অনেক সময় সীমান্তে তাদের কাজে লাগানো হয়েছে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে। একটা সময় বাংলাদেশ থেকে আসা সোনার বিস্কুট সীমান্তের গ্রাম থেকে কলকাতায় পৌঁছে দিতে কাজে লাগানো হতো দৃষ্টিহীন কয়েক জন ভিখারিকে। বাসে-ট্রেনে ভিক্ষে করতে করতে তারা পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সেই সঙ্গে বিস্কুটও। কিন্তু সোনার বিস্কুটের আনাগোনা মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকায় প্রতিবন্ধীদের কদর কমেছিল। কারণ, গরু পাচারে তাদের কাজে লাগানো যায় না। কিন্তু মাদক পাচারে? সেই ভাবনা থেকেই ফের প্রতিবন্ধীদের পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই মনে করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় সে কথা কবুলও করেছে শাহিন।
বছর কয়েক আগেও পাচারের কাজে জড়িয়ে পড়তেন মহিলারা। কারণ, সীমান্তে তখনও মহিলা বিএসএফ আসেনি। ফলে, সীমান্তের পথে কোনও মহিলাকে সন্দেহজনক বলে মনে হলেও তাকে তল্লাশি করা ছিল বিরাট ঝক্কির ব্যাপার। আর এই সুযোগটাই নিত পাচারকারীরা। পরে মহিলা বিএসএফ আসায় সে প্রবণতা অনেকটাই কমেছে।
পাচারে শিশুদের ব্যবহারও নতুন কিছু নয়। কখনও স্কুল ব্যাগে, কখনও ঘাসের বোঝার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হতে লাগল কাশির সিরাপ, গাঁজা। প্রথম দিকে সীমান্তের রাস্তায় বিএসএফ তাদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করত। কিন্তু চালচলনে সন্দেহ হওয়ায় একদিন সত্যিটা সামনে এল। বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সীমান্তে অকারণে কাউকে বিশ্বাস করার পরিণাম মারাত্মক হতে পারে।’’
জলঙ্গির বাসিন্দা আফজাল খান (নাম পরিবর্তিত) জন্মের পর থেকে পৃথিবীর আলো দেখেনি। কিন্তু ১৬ বছর বয়সেই সে ঢুকে পড়ে পাচারের অন্ধকার জগতে। সে জানাচ্ছে, ভিক্ষে করেই মাকে নিয়ে সে সংসার চালাত। আচমকা এলাকার জনাকয়েক লোক তাকে বিশ কিংবা পঞ্চাশ টাকা ভিক্ষে দিতে শুরু করল। মাঝেমধ্যে চা, মিষ্টিও খাওয়াত। তারপর একদিন তারা বলে, ‘ভিক্ষে করতে করতে কলকাতা যেতে পারবি? সে টাকা তো সব তোর। আমরাও মোটা টাকা দেব।’ না করেনি আফজল। তার কথায়, ‘‘টাকার দরকার ছিল। তাই বেশ কয়েক বার ভিক্ষের ঝুলিতে বিস্কুট নিয়ে কলকাতায় গিয়েছি। কিন্তু পরে মা জানতে পারার পরে ছেড়ে দিই।’’
ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘এখন প্রতিবন্ধীদের উপরেও নজর রাখছি। তবে যাতে কেউ অকারণে হয়রান না হয় সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy