এমন ছবি উধাও। —ফাইল চিত্র।
বানে ভাসছে কেরল! উদ্বেগের অন্ত নেই মুর্শিদাবাদে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ইদুজ্জোহা। প্রতি বছর সদলবলে ট্রেনে কিংবা বিমানে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। সেই পেরার মধ্যে লুকিয়ে থাকে আনন্দের পাশাপাশি উচ্ছ্বাস। এবারও কেউ কেউ ফিরছেন, তবে সেই ফেরায় রয়েছে বিষাদের ইতিকথা। সকলেই যে ফিরতে পারছেন, তা কিন্তু নয়। যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতা কোনও পরব ধুয়ে দিতে পারবে কি না, তা জানা নেই। তবে বাড়ি ফিরছেন এমন এক জন ডোমকলের শফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘এর আগেও ইদ-পরবে বাড়ি ফিরেছি, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। বুক-জল ঠেলে কোনও ভাবে স্টেশনে এসে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে চড়ে বসি। ট্রেনে যা ভিড়, টিকিট পাওয়ার কোনও আশা নেই। কিন্তু বেঁচে ফেরেছি যে ভাবে, তাতে বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে টিকিট পরীক্ষক ধরলেও কিছু এসে যেত না। যে কোনও উপায়ে চেয়েছি বাড়ি ফিরতে।’’
বাড়ির সকলেই জানে তাদের ছেলেরা কেরলে গিয়েছে কাজ করতে। কিন্তু কেরলের কোথায় কাজ করেন, তারা কেমন আছে—সে সব কিছু জানে না কান্দি, বেলডাঙা কিংবা ডোমকল। এক মাত্র ভরসা ছিল মোবাইল। কিন্তু সে মোবাইলেও ফোন করে কোনও সাড়া মিলছে না তাদের। বেলডাঙার দেবকুণ্ডু গ্রামের শরিফ মল্লিক কেরলের ত্রিচুর এলাকায় তিন দিন আটকে ছিলেন যে বাড়িতে, সেই বাড়ি ধসে গিয়েছে জলে। শরিফ মল্লিক ও তাঁর সঙ্গীরা সাঁতরে ডাঙায় ওঠেন। ওই পরিবার শরিফের ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। একই অবস্থা কান্দির লুতফা বিবির। তিনি বলছেন, “সাত দিন আগে ছেলের সঙ্গে কথা হয় ফোনে। তখনই বন্যার জন্য কাজ বন্ধ থাকার কথা জানায়। হাতে বেশি টাকাও নেই। ছেলেটা কী ভাবে আছে কে জানে!’’ সিরাজ দফাদারের দু’ছেলে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি বলছেন, ‘‘ফোনে বলেছিল দোতলায় আশ্রয় নিয়েছে। খাবার বলতে কিছুই নেই। না খেয়ে তারা এখন কেমন আছে কিছুই জানতে পারছি না।’’
শরিফ, সিরাজ, শফিকুল প্রতি বছর বাড়ি ফেরার আগে পরিবারের সকলের জন্য নতুন পোশাক কিনে আনতেন তাঁরা। এ বছর তার ব্যতিক্রম ঘটায় বিষাদে ঢেকেছে তাঁদের মন। বলছেন, ‘‘জানেন গত কয়েক মাস ধরে কেরলে কোনও কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েচে। নাগাড়ে বৃষ্টি এবং তার পরে বন্যায় ভেসে য়ায় সব কিছু। ফলে জমানো টাকাও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরতে না পারলে না খেয়ে মরতে হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy