জলমগ্ন: নর্দমার জলে ভাসছে রাস্তা। খুদেকালীতলায়। নিজস্ব চিত্র
নিজের ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। বৃষ্টিতে জলভাসি বাড়ির চারপাশ। এমন সময় রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি গেল আর জলের ঢেউ উঠে এল ঘরে। ভাতটাই নষ্ট। নিজের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন শান্তিপুরের খুদেকালীতলার বাসিন্দা বালিকারানি ঘোষ। শুধু বালিকা নন, এমন অভিজ্ঞতার শরিক এলাকার অনেকেই। রবিবার দুপুরেও গিয়ে দেখা গেল, নিকাশি নালা উপচে জল এসে পড়েছে রাস্তা। তা ঠেলেই যাতায়াত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বেহাল নিকাশির কারণে জল যন্ত্রণা নিত্যসঙ্গী শান্তিপুর শহরের বহু ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। ২৪ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত শান্তিপুরে বর্ষা এলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে পুরবাসীদের অনেকের। সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে যায় রাস্তা। বাদ পড়ে না বাড়ির উঠোনও। তখন ওয়ার্ড যেন বানভাসি গাঁ।
ঐতিহ্যবাহী শহরে নিকাশির এমন হাল নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে শহরে। শাসকদলের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়েও কেন নিকাশি সমস্যা মেটানো গেল না তা নিয়ে প্রশ্ন পুরবাসীদের অনেকের। জেলার রাজনৈতিক মহলের ধারণা, শান্তিপুরে নিকাশির সমস্যা বিরোধীদের পালে হাওয়া জোগাতে পারে। পুরসভার দাবি, পুরনো শহর হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। তার ফলে, চেষ্টা করেও নিকাশি সমস্যা বাগে আনা যায়নি।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিপুর পুরসভা দেড়শো বছর পার করেছে অনেক আগেই। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে শহরের জনসংখ্যাও। কিন্তু জেলার এই অন্যতম প্রাচীন জনপদে নিকাশি ব্যবস্থা আজও মাথাব্যথার কারণ পুরবাসীর অনেকের কাছে। কোনও জায়গায় নিকাশি নালা উপচে জল উঠে আসে রাস্তায় বা বাড়িতে। আবার কোথাও জল বড় নিকাশি নালায় যাওয়ার পরিবর্তে উজিয়ে আসে উল্টো দিকে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপুতপাড়া লেনে যেমন সারা বছরই প্রায় নিকাশি নালার জল চলে আসে রাস্তায়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম, অরুণ দলুইয়েরা বলছেন, “আমাদের পাড়া থেকে যে নালা চলে গিয়েছে সেখানে জল হাইড্রেনে যাওয়ার বদলে উল্টে এ দিকেই চলে আসে। সারা বছরই নালার জল রাস্তার ধারে চলে আসে। বৃষ্টি হলেই রাস্তার ওপরে উঠে আসে।” একই ওয়ার্ডের তোপখানাপাড়ার বাসিন্দা গৌতম প্রামাণিক বলেন, “বর্ষার সময় অনেক দিন বাড়ির সদর দরজা জলমগ্ন হয়েছিল। পুরসভাকে বারবার বলার পরে নিকাশি নালা কিছুটা পরিষ্কার করে। তাতে কিছুটা জল নেমেছে। এ বার দেখা যাক কী হয়।”
পুরবাসীদের একাংশ জানান, শান্তিপুরের আগমেশ্বরীতলার কাছে সর্বনন্দীপাড়ার দিকে যাওয়ার রাস্তা, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌগাছাপাড়া, ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরেকৃষ্ণ কলোনির মতো শহরের বহু জায়গাতে নিকাশির ছবিটা মোটামুটি একই। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের খুদেকালীতলার বাসিন্দা শান্তি ঘোষ, নুপুর ঘোষেরা বলছেন, “নিকাশি নালা উপচে রাস্তায় তো জল জমে থাকেই পাশাপাশি বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়িতেই প্রায় হাঁটু সমান জল হয়ে যায়। বাড়িতে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়ে।” শহরের নিকাশি নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা নিয়েও বিস্তার অভিযোগ রয়েছে পুরবাসীদের একাংশের। পাশাপাশি পরিকল্পনামাফিক নিকাশি নালার তৈরি দাবিও করছেন কেউ কেউ।
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরনো শহর তায় আগের থেকে জনবসতিও অনেক বেড়েছে। সে কারণে অনেক জায়গায় পরিকল্পনা মতো নিকাশি নালা তৈরিতে সমস্যা রয়েছে। ১২টি জলাশয়ে শহরের নিকাশি নালার জল গিয়ে পড়ে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে মানছে খোদ পুরসভাই। পুরসভা সূত্রে খবর, নিকাশির সমস্যা দূর করতে শহরে ছয়টি জায়গায় ২৪ কোটি ৯২ লক্ষ টাকায় অমরুত প্রকল্পে বড় নিকাশি নালা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে। শহরে ‘কভার ড্রেন’-এর পাশাপাশি নিচু জায়গা থেকে উঁচু এলাকার দিকে নিকাশি নালার জল নিয়ে যেতে একটি পাম্প হাউস তৈরি হবে। এর জন্য দালালপাড়ায় জমি কেনা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy