ঘর ভেঙে অন্যত্র পাড়ি। নিজস্ব চিত্র
ষাট বছরের চম্পলা মন্ডল। নিজের দালানে নিজে হাতে লাগানো ডুমুর গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। সোমবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে জেসিবি দিয়ে তার বাড়ি ভাঙা। বাঁধানো হরিতলাটা ভেঙে পড়তেই আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ডুকরে বেরিয়ে আসা কান্না থামাতে নিজের শাড়ির আঁচলটা চাপা দিলেন মুখে। পাশেই খাটিয়ায় শুয়ে প্রসূতি পুত্রবধূ শম্পা। কিচ্ছুটি মুখে কাটেননি কেউ। রবিবার সকালটা এমনই নিরন্ন তাঁদের। রান্না বন্ধ। ঘর থেকে এক এক করে সরিয়ে নিয়েছেন জিনিসপত্র। বাড়িতে থাকা প্লাস্টিকে ঢেকে রাখতে হয়েছে তা। রাত থেকে মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি।
গাছতলাতে কতটুকুইবা বৃষ্টি আটকায়। উপরে বৃষ্টির জল, নীচে নদীর জল— জোড়া ধাক্কায় পুজোর মুখে ঘুম কেড়েছে বিপর্যস্ত হোসেনপুরের চম্পলার মত বহু পরিবারেরই। তবে এই অসহনীয় অভিজ্ঞতার সাক্ষী চম্পলার এই প্রথম নয়। বলছেন, “নদী ছিল এক কিলোমিটার দূরে। এই নিয়ে তিন তিন বার নদীতে ধসে যাওয়ার মুখে বাড়ি ভেঙে নিতে হল। যতবার নদী ভেঙেছে ততবার তিন-চার’শো মিটার করে পিছিয়ে এসে ঘর তুলেছি। নদী এত ভয়ঙ্কর ছিল না তখন। তাই ভাবতেও পারিনি শেষ বয়সে এসেও এই ভয়ঙ্কর অবস্থার মুখে পড়তে হবে।’’ স্বামী,স্ত্রী, দুই ছেলে মেয়ে, ঘরে পোয়াতি বৌমাকে নিয়ে ফের কোনওদিন গাছ তলায় দাঁড়াতে হবে ভাবেননি ওঁরা কেউই।
মধ্য পঞ্চায়শের তারাপদ মন্ডল, পেশায় দিনমজুর। এক সময় ঘর ছিল মালদহের চক বাহাদুরপুর। সেখান থেকে বসতি হারিয়ে বাসা বেঁধেছিলেন হোসেনপুরে । ২৫ বছরে এই নিয়ে তিন তিনবার ভাঙনে ঘর হারালেন । বলছেন, “কি আর বলব? ৮ ছেলে মেয়ে, স্ত্রীর বিশাল সংসার টেনে ৪টি মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বাড়ির পাকা দেওয়ালের উপর খড়ের ছাউনি দিয়ে এই ঘরটা গড়েছিলাম বছর সাতেক আগে। সামান্য যা জমি জিরেত ছিল সব শেষ। জেসিবির ধাক্কা তাই এখন নিজেরই বুকে এসে বিঁধছে।” রেনু মন্ডল হাপুস নয়নে কেঁদে যাচ্ছেন নিজেদের হাতে নিজেদের ঘর এভাবে ভেঙে নেওয়ায়। গা ঘেঁষে পায়ে পায়ে দাঁড়িয়ে তারই পোষা তিনটি ছাগল। তারাও যেন পেয়ে গেছে বিপদের সঙ্কেত। পুবের দেওয়ালটায় জেসিবি’র আঘাত পড়তেই লাগোয়া আমড়া গাছটা ধসে পড়ল। রেনু বলছেন, “গ্রামের প্রত্যেকের বাড়িতেই লাগানো ছিল নানা ধরণের গাছ। আমড়া, ডুমুর, পেঁপে, কুমড়ো, শাক আরও কত কি। সারা বছরের সব্জিটা হত নিজের বাড়ি থেকেই। সব ঘরেই ছাগল রয়েছে দু, পাঁচটা। নুন ভাতের অভাব ছিল না কারও। আজ সব শেষ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy