Advertisement
E-Paper

‘ব্যর্থ প্রেমিক’ এবং ‘অসুখী গৃহিণী’র ভিড় সবচেয়ে বেশি! কালীপুজোর রাতে পসার জমল তন্ত্রসাধকদের

মুর্শিদাবাদের একাধিক তন্ত্র পীঠে ভিড় জমালেন সমস্যাগ্রস্ত মানুষজন। জেলার একের পর এক শ্মশানে তন্ত্রসাধকদের দ্বারস্থ হলেন প্রচুর যুবক-যুবতী।

tantra

— প্রতীকী চিত্র।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪২
Share
Save

সদ্য চাকরি পেয়েছেন। পরিবারের সবাই খুশি। কিন্তু বহরমপুরের বাসিন্দা সোহম রায় (নাম পরিবর্তিত) ভাল নেই। চাকরি পাওয়ার খবরে যে মানুষটি দারুণ খুশি হতেন, তিনিই আজ পাশে নেই। ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝিতে প্রেমিকার সঙ্গে কথা বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও প্রেমিকার মান ভাঙাতে পারেননি। তাই মাসখানেক আগে ‘বুকিং’ করে এক তান্ত্রিকের ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ নিয়েছিলেন সোহম। বৃহস্পতিবার তান্ত্রিকের সঙ্গে কথা বলার পর মনের ভার খানিক নেমেছে।

বিজ্ঞাপন দেখে প্রায় আড়াই মাস আগে থেকে ‘অ্যাডভান্স বুকিং’ নিয়ে আর এক তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের পায়েল রায় (নাম পরিবর্তিত)। ওই গৃহবধূর দাবি, স্বামী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তাই কালীপুজোর রাতে তান্ত্রিকদের কাছে গিয়েছিলেন তিনি।

এ ভাবেই ব্যক্তিগত থেকে সাংসারিক, নানাবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য মুর্শিদাবাদের একাধিক তন্ত্রপীঠে ভিড় জমালেন সমস্যাগ্রস্ত মানুষজন। জেলার একের পর এক শ্মশানে তন্ত্রসাধকদের দ্বারস্থ হলেন প্রচুর যুবক-যুবতী। সোহম, পায়েলদের মতো আরও বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তান্ত্রিকদের কাছে দৌড়ে আসা ‘ভক্ত’দের বেশির ভাগের সমস্যাই ‘প্রণয়ঘটিত’।

বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ, কান্দি-সহ আরও কয়েকটি শ্মশানে তন্ত্রক্রিয়া হয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে তার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তন্ত্রের মাধ্যমে নানা সমস্যা সমাধানের আশায় তান্ত্রিকদের দ্বারস্থ হন প্রচুর মানুষ। তন্ত্রসাধক এবং ‘ভক্ত’দের সমাগমে বেশ কিছু জায়গায় গ্রামীণ মেলাও হয়েছে। কয়েক জন তান্ত্রিক জানাচ্ছেন, প্রেমিক বা প্রেমিকার মানভঞ্জন, দাম্পত্য কলহ, আর্থিক সমস্যা, ব্যবসায় মন্দার মতো সমস্যা সমাধানের আশায় যজ্ঞে শামিল হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে তন্ত্রের প্রতি এমন আস্থাকে অবৈজ্ঞানিক বলছেন বিজ্ঞানকর্মীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এই সমস্ত কুসংস্কার যত দিন থাকবে, তত দিন আমরা পিছিয়ে থাকব। জনমানসে বৈজ্ঞানিক প্রচারের আরও বেশি প্রয়োজন।’’ অন্য দিকে, ‘সাধক’দের দাবি, তন্ত্রক্রিয়ার পদ্ধতি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। আর কাজ হয় বলেই এত মানুষ ছুটে আসেন।

মুর্শিদাবাদ এলাকায় ‘তন্ত্রসাধক’ ওই আচার্যের কাছে প্রচুর মানুষ আসেন। বৃহস্পতিবার ভিড় ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। তাঁর দাবি, ‘‘সিংহভাগ তন্ত্রক্রিয়া কিন্তু বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। সাধারণ কিংবা অল্প জ্ঞান দিয়ে এই প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান যেখানে নতিস্বীকার করে, সেই সমস্যা সমাধান তন্ত্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় বলেই মানুষ বার বার ফিরে আসেন।’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, কালীপুজোর রাতে যত মানুষ তন্ত্রসাধকদের কাছে ছুটে এসেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষিত। কেউ কেউ সমাজে প্রতিষ্ঠিতও। তবে ব্যক্তিগত এমন কিছু সমস্যা যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব নয়, তার সমাধান তাঁরা করেন। ওই ব্যক্তির দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়ে পুরোটাই বুজরুকি বলে উড়িয়ে দেন মুর্শিদাবাদ জেলার বিজ্ঞানকর্মী তপব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষের দুর্বল জায়গায় সুড়সুড়ি দিয়ে অর্থ রোজগারের ফন্দি বহু দিন ধরেই চলছে। কিন্তু আবারও বলে রাখা প্রয়োজন, এটা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক এবং কুসংস্কার। এ সবের বিরুদ্ধে আমরা নিরন্তর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। বিজ্ঞান এবং কুসংস্কারের লড়াই চলবে।’’

যুক্তি কিংবা পাল্টা যুক্তিতে বিশেষ উৎসাহ নেই প্রেমিকার মান ভাঙাতে চাওয়া সোহম কিংবা রাহুল সেনের (নাম পরিবর্তিত)। রাহুল বলেন, ‘‘কলেজ জীবন থেকে প্রেমের সম্পর্ক। ওর উপরে কেউ ‘কালা জাদু’ করেছে। না হলে কখনও ও আমাকে ভুল বুঝতেই পারে না।’’ রাহুলের সংযোজন, ‘‘জ্যোতিষ মহারাজ ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিয়ে কাজ করে দেবেন বলেছেন। আমার শেষ ভরসা উনি। এ ছাড়া আমার কাছে আর উপায় নেই।’’

Tantra Kali Puja Murshidabad

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}