Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পুণ্যের বিনিময়ে পলিপ্যাক

 প্রথম প্রথম হ্যান্ডবিল, মাইক প্রচার, পুলিশ নিয়ে আচমকা দোকান-বাজারে হানা দিত পুরসভা। একটু আশ্বস্ত হয়েছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে প্লাস্টিক নিয়ে কড়াকড়ি হাল্কা হতেই ফের নবদ্বীপ সেই তিমিরে। 

চলছে প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

চলছে প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০১:৩০
Share: Save:

বছর তিনেক আগের কথা। ‘দ্য প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুল- ২০১৬’ জারি করে দেশ জুড়ে পঞ্চাশ মাইক্রনের নীচে ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হল। ওই বছরই ৩০ অগস্ট নবদ্বীপ পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলারদের বৈঠকে শহরকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চৈতন্যধামের পরিবেশ রক্ষায় পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয় নির্দিষ্ট ওজনের নীচে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করলে তা শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ২০১৬’র সেপ্টেম্বর মাস থেকেই নির্দেশ কার্যকর হয়।

প্রথম প্রথম হ্যান্ডবিল, মাইক প্রচার, পুলিশ নিয়ে আচমকা দোকান-বাজারে হানা দিত পুরসভা। একটু আশ্বস্ত হয়েছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে প্লাস্টিক নিয়ে কড়াকড়ি হাল্কা হতেই ফের নবদ্বীপ সেই তিমিরে।

আবার, পলিব্যাগের রমরমা চোখে পড়ছে খাবারের দোকান থেকে মুদিখানা, আনাজ বাজার থেকে মাছ-মাংসের বাজার— সর্বত্র। গরমাগরম তেলেভাজা থেকে জীবনদায়ি ওষুধ। বিয়ের বেনারসী থেকে ত্বকচর্চার তেল, সাবান, শ্যাম্পু এই শহরে সবই বিকোয় সস্তার প্লাস্তিক ব্যাগে। সাত সকালে খালি হাতে বাজারে বেরিয়ে নানা আকারের গাদাখানেক প্লাস্টিক ব্যাগে বাড়ি ফেরার রেওয়াজ যেন বহু গুণ হয়ে ফিরে এসেছে সম্প্রতি।

দীর্ঘ দিন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে অভ্যস্ত নবদ্বীপের ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষের কেউই সে সময়ে পুরসভার ওই নির্দেশে বিশেষ খুশি হননি। বিশেষ করে, প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবসায়ীরা। অথচ, পরিবেশপ্রেমীরা বলছেন, পুরসভার তরফে প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ টানা শুরু হতে সে সময়ে চোখে পড়ার মতো বদল চোখে পড়েছিল। বাজারে, দোকানে আচমকা হানা দিয়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ, প্লাস্টিক কাপ বাজেয়াপ্ত করা হত। কাজও হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেন সেই কাজ থমকে গেল, তার কোনও উত্তর জানা নেই।

গোটা পৃথিবীর মতোই প্লাস্টিকের বল্গাহীন ব্যবহারে বিপদ বাড়ছে নবদ্বীপের। কেননা, বন্যাপ্রবণ শহরে প্লাস্টিক ব্যাগের বিপুল ব্যবহারে গোটা নবদ্বীপে নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সার্বিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ।

নবদ্বীপের রাস্তা, নর্দমা, গঙ্গার ঘাট কিংবা মন্দির চত্বরে একটু নজর মেললেই চোখে পড়ে হাজারো রকমের প্লাস্টিকের প্যাকেট। উৎসব অনুষ্ঠানের পর তো কথাই নেই। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বহিরাগত পর্যটকের দল পুণ্যের বিনিময়ে নবদ্বীপকে ভরে দিয়ে যান প্লাস্টিকে। যা শেষপর্যন্ত জড়ো হয় নিকাশি নালায়। বিপর্যস্ত হয় নিকাশি ব্যবস্থা। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য জানাচ্ছে এখন ভারতে প্রতিদিন ২৫৯৪০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রত্যেক ভারতবাসী বছরে মাথাপিছু গড়ে এগারো কেজি করে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করেন।

নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস উদ্বিগ্ন স্বরে বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পুরসভা নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর সাময়িক ভাবে তা বন্ধ হয়েছিল। কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেও বেশির ভাগ মানুষই ফিরে গিয়েছেন পুরনো অভ্যাসে। বরং আগের চেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে।”

এই প্রসঙ্গে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পুরসভার অবস্থান স্পষ্ট। কোনও ভাবেই তার অন্যথা হতে দেওয়া যাবে না। রবিবার পুরসভার তরফে বাজারে কয়েক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। দেখছি কী ভাবে এটা রোধ করা যায়।”

শহরের বেশ কিছু নামী দোকান প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বহু কাল। তাঁদের বিক্রি বিন্দুমাত্র কমেনি। সেখানে কিন্তু দিব্যি প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়াই জিনিস কিনে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা!

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Carrybags Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy