কান্তি ভাস্কর। —নিজস্ব চিত্র
লকডাউনের কারণে থমকে ক্যানসার আক্রান্ত কান্তি ভাস্করের চিকিৎসা। বন্ধ কেমোথেরাপি, বন্ধ পেটের টিউমার অপারেশনও। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই বাড়িতে ছটফট করছেন বছর পঞ্চান্নর কান্তিবাবু। হরিহরপাড়ার ডল্টনপুর গ্রামের বাসিন্দা কান্তিবাবু পেশায় কাঠমিস্ত্রি। নিজের বাড়ির সামনে এক চিলতে ছাউনিতে বসে গরুর গাড়ির কাঠের চাকা, কাঠের লাঙল তৈরি করেই সংসার চলত তাঁর। যদিও চাষের আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে বিলুপ্তির পথে এই পেশা। তবুও পেটের তাগিদে এবং অন্য কাজ না জানায় পুরনো পেশাকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার তাঁর। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি।
বছর খানেক আগে পাকস্থলীতে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার পিজি (এসএসকেএম) হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন একাধিক বার। ইতিমধ্যে তাঁর চারটি কেমোথেরাপি হয়েছে। এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে তার পঞ্চম কেমোথেরাপি হওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের কারণে বন্ধ ট্রেন বা বাস চলাচল। ফলে তিনি কলকাতায় চিকিৎসার জন্য যেতে পারেননি। তা ছাড়া, মাস দু’য়েক আগে আলট্রাসোনোগ্রাফি করে পেটে টিউমারও ধরা পড়েছে। কলকাতার পিজি হাসপাতাল থেকেই তাঁর সিটি স্ক্যান করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। চলতি মাসেই তাঁর অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের গেরোয় থমকে গিয়েছে কান্তিবাবুর চিকিৎসা। তা ছাড়া প্রতি মাসে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয় কান্তিবাবুকে। হরিহরপাড়া বা বহরমপুরের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ করেও সব ওষুধ মিলছে না। ফলে এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু জরুরি ওষুধ।
কান্তিবাবুর স্ত্রী চায়না ভাস্কর বলেন, ‘‘এক বছরের বেশি সময় ধরে স্বামীকে নিয়ে ভুগছি। এ মাসেই তাঁর পেটের টিউমার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারনে চিকিৎসা বন্ধ আছে। গত মাসে একটা কেমো হওয়ার কথা ছিল সেটাও হয়নি। কী যে হবে বুঝতে পারছি না।’’
অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই কাজ করতে পারেন না কান্তিবাবু। ছেলেও বাবার কাজেই সাহায্য করতেন। এখন সামান্য জমি থেকে যা ফসল ওঠে তাই, আর রেশনের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে কোনওক্রমেই চলে কান্তিবাবুর পরিবারের। কান্তিবাবু বলেন, ‘‘অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই দিন রাত কাটাতে হচ্ছে।’’ হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তরফে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে যতদিন লকডাউন না উঠছে, ততদিন কলকাতাও যেতে পারছেন না চিকিৎসার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy