কংগ্রেস,সিপিএম,তৃণমূল - লালগোলা বইমেলার তিন কান্ডারী। ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
হেরোইন ও সীমান্তের পাচার রুখে সুস্থ সংস্কৃতির প্রসার ও প্রচার আনতে ২০১৪ সালে মূলত পুলিশের ভাবনা থেকেই লালগোলায় শুরু হয়েছিল বইমেলা। সেই বইমেলা এ বারে ১১ বছরে পড়ল। মঙ্গলবার লালগোলা এমএনএকাডেমি মাঠে শুরু হল। কথা ছিল মেলার উদ্বোধন করবেন, কিন্তু এলেন না মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব। মঞ্চ জুড়ে রইলেন লালগোলার তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজ্য জুড়ে সর্বত্র যখন খেলা, মেলার মঞ্চ দখলে শাসক দলের একাধিপত্য, ঠিক তখনই লালগোলার বইমেলার মঞ্চের এমন সমন্বয় এলাকার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এ বারের মেলায় বইয়ের স্টলের সংখ্যা কমেছে ১৮-তে। বাণিজ্যিক স্টল ৪০টি। মেলায় প্রাঙ্গণে হবে আবৃত্তি, বসে আঁকো, কুইজ, রাঁইবেশে, নৃত্য ও সঙ্গীত-সহ নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছাড়াও রয়েছে কবি সম্মেলন। চলছে পুষ্প প্রদর্শনী। একাধিক স্কুলও যোগ দিয়েছে মেলায়।তবে বইমেলায় বইয়ের স্টলই কমেছে।
যুগ্ম সম্পাদক রতন ঘোষ বলেন, “আসলে এই সময় চারিদিকে বইমেলার হিড়িক থাকে। লালগোলায় বই বিক্রিও কম। তাই বইয়ের প্রকাশক ও ব্যবসাদাররা সে ভাবে উৎসাহিত হননি এ বারে। তা ছাড়াও আর্থিক বাজেট একটা প্রশ্ন। এক সময় টাকা যেন হাওয়ায় উড়ত লালগোলায়। মাদক কারবারের রমরমায় দু’হাতে টাকা বিলিয়ে উৎসব অনুষ্ঠানের মঞ্চ দখল করত তারা। সেই মঞ্চ দখল রুখে শহরে সুস্থ সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ভাল মানুষদের সামনে আনতেই বইমেলার সূচনা। সে দিনই আমরা শপথ নিয়েছিলাম, পাপের একটি পয়সাও নেবে না বই মেলা। সেই রীতি মেনেই গত এক মাস ধরে চাঁদা তোলা হয়েছে বইমেলার।”
বইমেলার সহ সভাপতি ও কংগ্রেসের সভাপতি যদুরাম ঘোষ বলছেন, “লালগোলা এখন অনেক বদলেছে। এক সময় লালগোলা পাচার ও মাদকের শক্ত ঘাঁটি ছিল লালগোলা। বইমেলার শুরুতে স্বপ্ন ছিল তাদের সরিয়ে একটি সুস্থ সমাজের জন্ম দেওয়া, তাতে অনেকটাই সাফল্য এসেছে বৈকি! আরও সাফল্য রাজনৈতিক সৌজন্য। আমি যে তৃণমূল প্রার্থীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হারিয়েছি তিনিই আমার পাশে বসে এক মাস ধরে বইমেলার চাঁদা তুলেছেন। পরিকল্পনা করেছি মেলার। এই মেলামেশা লালগোলার রাজনৈতিক পরিসরকে সৌজন্য শিখিয়েছে।আমরা তা মনে রাখি।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ব্লক সভাপতি মহম্মদ সারজামান শেখ বইমেলার সহ সভাপতি। তিনি বলছেন, “বইমেলা আমাদের রাজনৈতিক সৌজন্যের শিক্ষা দিয়েছে। এটার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে যাঁর ভাবনায় লালগোলাতে বইমেলা করার চেষ্টা তাঁর। লালগোলাকে কলুষমুক্ত করতে উদ্যোগী ছিলেন তৎকালীন ওসি জামালুদ্দিন মণ্ডল। নতুন প্রজন্ম যেন অতীত ভুলে লালগোলাকে নতুন দিশা দেখতে পারে। তবে মূল্যায়ন যদি করি, তবে বলতেই হয় সাফল্য তো এসেছেই।”
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় শুরু থেকেই বইমেলা কমিটির অন্যতম সহ সভাপতি। তিনি বলছেন, “এই বইমেলা দু’টি ক্ষেত্রে লালগোলাকে পথ দেখিয়েছে। রাজনৈতিক শালীনতা এবং মাদক মুক্ত পরিবেশ। মানুষের বিনোদনের জায়গা তো অনেক কম। সেই পরিসরটা গড়ে দিয়েছে বইমেলা। মালিন্যমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের বড় অভাব দেশে।”
জামালুদ্দিন বলেন, “লালগোলার মানুষ কেমন আছেন, সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন। লালগোলা এক দিন যে অবস্থায় ছিল এবং বইমেলার প্রভাব ১১ বছরে কতটা পড়েছে, তার মূল্যায়ন করবেন তাঁরাই। লালগোলা এখন অনেক শান্ত। রাজ্যে তো বটেই সারা দেশের মধ্যে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় বইমেলা সম্ভবত লালগোলাতেই প্রথম শুরু হয়। সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা যে ভাবে সে দিন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, তার ফলেই এসেছিল এই সাফল্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy