প্রতিবাদ করলে রোগীর ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর চলে অ্যাম্বুল্যান্সেও। —নিজস্ব চিত্র।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় রোগীকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সালার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, তাঁকে দ্রুত ডায়ালিসিস পরিষেবাযুক্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তাই মাকে আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রাক্তন সেনাকর্মীর ছেলে। অ্যাম্বুল্যান্স ডাকেন তিনি। অভিযোগ, এর পর সরকারি হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ‘দাদাগিরি’ শুরু হয়। এমনকি একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার পরও রোগীকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। কেন অন্য অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হল, সেই ‘অপরাধে’ আর্থিক জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা দেবেন বলে কথা দিয়ে, রোগীকে নিয়ে কোনও ক্রমে হাসপাতাল চত্বর ছাড়েন তাঁর পরিবার। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পর সালার ফুলরি মোড়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয় গুরুতর অসুস্থ ওই মহিলা এবং তাঁর পরিবারের লোকজনকে। প্রতিবাদ করলে রোগীর ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ধস্তাধস্তিতে অত্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীর নাকে লাগানো অক্সিজেনের নল খুলে যায় বলে অভিযোগ। পরিবারের অভিযোগ, অক্সিজেনের ঘাটতিতে হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনির জটিল সমস্যায় ভুগছেন সালারের মাধাইপুর গ্রামের বাসিন্দা চাঁদতারা বিবি। তাঁর স্বামী ছিলেন প্রাক্তন সেনাকর্মী। সোমবার রাতে অসুস্থতার কারণে চাঁদতারা বিবিকে সালার ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান পরিবারের লোকজন। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানান অতি দ্রুত ডায়ালাসিস করাতে হবে। সে জন্য কলকাতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় পরিবার। কিন্তু ‘পছন্দের অ্যাম্বুল্যান্সে’ রোগী নিয়ে যাওয়া শুরু হয় বিতর্ক। চালকদের দাবি, যে সমস্ত অ্যাম্বুল্যান্স লাইনে আছে সেখান থেকে কাউকে নিয়ে যেতে হবে। অন্য অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
কিন্তু অন্য অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে যেতেই প্রথমে পথ আটকানো হয়। এই ঝামেলার মধ্যে কলকাতায় পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় ৪২ বছরের ওই রোগীর। রোগীর মৃত্যুতে সালার ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়ানো বিভিন্ন অ্যাম্বুল্যান্সে ভাঙচুর চলে। মঙ্গলবার দুপুরে দেহ নিয়ে যাওয়া কান্দি মহকুমা হাসপাতালের মর্গে। একই সঙ্গে তিন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক আরিফ শেখ, জিয়ারুল শেখ এবং টনি শেখের বিরুদ্ধে সালার থানায় লিখিত অভিযোগ করে মৃতার পরিবার।
মৃত মহিলার ছেলে শাকিব আলির কথায়, ‘‘আমরা যে অ্যাম্বুল্যান্সে মাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তার চালক পূর্বপরিচিত। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মাকে কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাই ওখানকার রাস্তাঘাট ভাল চেনেন। কিন্তু এখানের অন্য অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা দাবি করেন ওঁদের কারও অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে হবে। অন্য অ্যাম্বুল্যান্স নেওয়ায় বেশ কিছু টাকা ওঁদের ‘জরিমানা’ও দিতে রাজি হয়ে যাই। এ ভাবেই ঘণ্টাখানেক কাটে। তার পরে আবার ফুলুরি মোড়ে আমাদের গাড়ি আটকে মারধর করা হয়। মায়ের নাকের অক্সিজেনের নল খুলে দেওয়া হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার মাকে খুন করা হয়েছে। আমি ওঁদের কঠিন শাস্তি চাই।’’ রোগিণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সের চালক রিপন শেখ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওদের হাতজোড় করে বলি আমি আর কোনও দিন এই রুটে অ্যাম্বুল্যান্স চালাব না। এ বারের মতো আমায় রোগী নিয়ে যেতে দাও। ওরা তার পরেও আমাকে মারধর করল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy