নদিয়ার দুই বিঘা জমিতে অভিযানে বিএসএফ। —নিজস্ব চিত্র।
দু’বিঘা জমি জুড়ে আমবাগান। রয়েছে কলাগাছ, জংলা গাছগাছালি। রয়েছে ‘ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়’ কুঁড়েঘরও। কিন্তু সেই ‘পল্লবঘন আম্রকানন’ই শুক্রবার থেকে ঘুম ছুটিয়েছে পুলিশ এবং বিএসএফের। শনিবার দুপুর পর্যন্ত নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার মাজদিয়া থানা এলাকার নাগাটা সীমান্ত এলাকার আমবাগানে রাখা চারটি বাঙ্কার থেকে মিলেছে প্রায় দেড় কোটি টাকার নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের বোতল। বিএসএফ মনে করছে, ও পারে পাচারের ছক ছিল প্রায় ৬২ হাজার বোতল ফেনসিডিলের। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সেই অপচেষ্টা রুখে দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু জমির মালিকের খোঁজ মিলছে না।
বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণিবিভেদ এবং দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সঙ্গে নদিয়ার দুই বিঘা জমির অমিল অনেক। আবার মিলও বিস্তর। কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া সুধারঞ্জন লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়ের পাশে আমবাগানের আশপাশে রয়েছে ধানচাষের জমি, পুকুর ইত্যাদি। জানা যাচ্ছে, একেবারে নিরিবিলি এই জায়গাটির মালিকের নাম লাল্টু মহারাজ। স্থানীয়দের কেউ তাঁকে দেখেছেন, কেউ দেখেননি। তবে নামের সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। তিনি-ই দুই বিঘা জমির ‘উপেন’। লোকমুখে তিনি-ই আবার ‘মহারাজ’ নামে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নবদ্বীপের চরব্রহ্মনগর এলাকায় নাকি সম্প্রতি ডেরা তৈরি করেছেন ‘লাল বাবা’ ওরফে ‘লাল্টু মহারাজ’ মাত্র মাস ছয়েক আগে এক নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় দুই বিঘা জমি কেনেন। ঘন কলাবাগানের মধ্যে সদ্য মাথা তুলেছে কিছু আম এবং লিচুগাছ। সেই জমিতেই কি লাল্টুবাবা ‘গোপন কম্ম’ শুরু করেন? শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টা থেকে প্রায় ২৫ ঘণ্টা ওই জমিতে তল্লাশি অভিযান চালায় বিএসএফ। উদ্ধার হয় এক একটি করে মোট চারটি বাঙ্কার। আর তার মধ্যে রাখা কার্টনে রাখা গুচ্ছ গুচ্ছ নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে পুলিশ-প্রশাসন, এমনকি সাউথ পোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএফ আধিকারিকরাও জমির মালিক সম্পর্কে এখনও তেমন তথ্য পাননি।
আমবাগানে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের বোতল লুকোনোর খবর পেয়ে বিএসএফের কর্তারা গিয়েছিলেন। তার পর ভূমি দফতরের নথি ঘেঁটে খোঁজ শুরু হয় জমির মালিকের। তার পর মহারাজের তথ্য মিলেছে। কিন্তু তাঁর ঠিকানায় অভিযান চালিয়েও মহারাজকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুজাতা হালদারের দাবি, ওই জমিটির মালিকের খবর তিনি জানেন না। তবে বিএসএফ যে বাঙ্কার উদ্ধার করেছে ওই জমিতে, সে খবর পেয়েছেন। অন্য দিকে, সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মাজদিয়া ব্লকে যথেষ্ট প্রভাবশালী অধুনা জমির মালিক। জমি কেনার পর মাত্র দু’বারই নাকি তাঁকে বাগানে দেখা গিয়েছে। স্থানীয় চার ব্যক্তি বাগানটির দেখভাল করতেন। একটি টিনের ঘর তৈরি করে তার মধ্যে থাকতেন তাঁরা। প্রতিবেশীদের দাবি, ওই টিনের ঘরে মদ্যপান এবং তাস খেলার আসর বসত নিয়মিত। মাঝেমাঝে অচেনা মুখেরও যাতায়াত ছিল বাগানে। এর বেশি কেউ কিচ্ছু জানেন না।
সেই জমি থেকে বাঙ্কার এবং নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ উদ্ধারের পর এলাকায় হইচই হচ্ছে। কেউ কেউ কৌতূহলী জমির মালিককে নিয়ে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে জানান, বিএসএফ যে রকম ভাবে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে, পুলিশ তা করেছে। কোনও অভিযোগ জানালে তার তদন্ত করবে পুলিশ। অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (জনসংযোগ) এনকে পাণ্ডে জানান, বিএসএফের গোয়েন্দারা জমির মালিকের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় সাফল্য যেখানে পাওয়া গিয়েছে, মূল মাথা অবধি পৌঁছনো সম্ভব হবে বলেই আমরা আশাবাদী।’’ তবে স্থানীয়দের অসহযোগিতা নিয়ে খানিকটা খেদ প্রকাশ করেন বিএসএফের ডিআইজি। তিনি জানান, স্থানীয়েরা জমির মালিক সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য দিচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘স্থানীয়দের অসহযোগিতায় আমাদের কাজ একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy