দীপ দান। মায়াপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
রক্ত না পেয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সোমবার রিপোর্ট তলব করল স্বাস্থ্য দফতর। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত মজুত থাকার পরেও কেন তাহেরপুরের বাসিন্দা কাকলি রায়কে রক্ত দেওয়া হয়নি, তা-ও লিখিত ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের গুঁতোর পরে এ দিন দফায় দফায় বৈঠকে বসেন জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ব্লাড ব্যাঙ্কের যে দু’জন কর্মী কাকলির পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শো-কজ করা হয়েছে বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। রক্তের অভাবেই কাকলির মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। যদিও দিনভর বৈঠকের পরেও একটা প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। রক্তের অভাবে মৃত্যু না হলেও মুমুর্ষু রোগীকে রক্ত না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার ব্লাড ব্যাঙ্কের রয়েছে কি না।
রবিবার সকালে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে আসা কাকলি রায়কে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা তখনই দু’ইউনিট রক্ত আনতে বলেন। কিন্তু, তাঁদের তরফ থেকে দু’জন ব্লাড ব্যাঙ্কে দু’ইউনিট রক্ত না দিলে রক্ত দেওয়া যাবে না বলে কাকলির স্বামী অপূর্ববাবুকে সাফ জানিয়ে দেয় ব্লাড ব্যাঙ্ক। এর পর দফায় দফায় গিয়ে অপূর্ববাবু ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাছে কাকুতি মিনতি করলেও লাভ হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেও রক্ত জোগাড় করতে পারেননি অপূর্ববাবু। রোগীর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় চিকিৎসক রক্তের রিক্যুইজিশন স্লিপের উপর ‘আর্জেন্ট’ শব্দটি লিখে দিলে ভর্তি হওয়ার চার ঘণ্টা পর রক্ত হাতে পান অপূর্ববাবু। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে কাকলির।
সোমবার সকালে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় দফায় দফায় ফোনে বিষয়টি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরী এবং অধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান। পরে লিখিত ভাবে স্বাস্থ্য অধিকর্তা রিপোর্ট তলব করেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মুকুল রায়ও ফোন করে ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
বেলার দিকে বৈঠকে বসেন স্নেহপ্রিয়বাবু এবং শান্তনুবাবু। সেই বৈঠকে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের ডাকা হয়। তলব করা হয় ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তপন দত্তকেও। ব্লাড ব্যাঙ্কের যে দু’জন কর্মী কাকলির পরিবারের লোকেদের রক্ত দিতে অস্বীকার করেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শো-কজ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে হবে।
তদন্তের জন্য কয়েক জন চিকিৎসকের একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়। ঠিক কী কারণে কাকলির মৃত্যু হয়েছে তার রিপোর্ট দেবে ওই বিশেষ দলটি। শান্তনুবাবু জানান, তদন্ত করে তাঁরা জানার চেষ্টা করছেন, রক্তের অভাবেই কাকলির মৃত্যু হয়েছে কি না। ভর্তি হওয়ার পরেই তাঁর রক্তের প্রয়োজন ছিল কি না। নাকি, পরে রক্ত চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত রিপোর্ট নিয়ে মেডিক্যাল সুপার তা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাবেন।’’
কাকলিদেবীর বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের থেকে চিকিৎসকরা রক্ত চেয়েছিলেন। এবং বারবার রক্ত তলব করেছিলেন বলেই তাঁরা পাগলের মতো ছোটাছুটি করেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, রক্তের যদি প্রয়োজন নাই থাকবে, তা হলে কাকলির মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে রক্তের রিক্যুইজিশন স্লিপে চিকিৎসক ‘আর্জেন্ট’ শব্দটি লিখে দিয়েছিলেন কেন? আরও প্রশ্ন উঠছে যে, কেবলমাত্র রক্তের অভাবে মৃত্যু হবে এমন রোগীই কি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পাবেন? রক্তের বদলে রক্ত চাওয়ার অধিকার ব্লাড ব্যাঙ্কের রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘না, তেমন অধিকার ব্লাড ব্যাঙ্কের নেই। এমন অভিযোগ নজরে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রক্তের অভাবে মৃত্যুর ঘটনা জানার পর জেএনএম-এ আসা রোগীদের আত্মীয়রা এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, এ দিনও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে গেলে, কয়েক জনের থেকে বদলে রক্ত চাওয়া হয়। পরে তা চিকিৎসকদের নজরে এলে, তাঁরা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীদের সাবধান করে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy