Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

জমি বিবাদে নিহত প্রৌঢ়, গুরুতর জখম ১৩ জন

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে  ওই গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক হাজরা ও রমেশ হাজরার পরিবারের মধ্যে বিবাদ লেগেই ছিল। দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা থাকলেও সেই বিবাদ কখনও মিটত না।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্বজনেরা। নিজস্ব চিত্র

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্বজনেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভরতপুর শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০১:০৮
Share: Save:

জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে দুই পরিবারের লোকজনের মারপিটের ঘটনায় খুন হয়েছেন এক প্রৌঢ়। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৩ জন জখম হয়েছেন। শনিবার ভরতপুরের ঝিকড়া গ্রামের ঘটনা। নিহতের নাম মাধব হাজরা (৫২)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে ওই গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক হাজরা ও রমেশ হাজরার পরিবারের মধ্যে বিবাদ লেগেই ছিল। দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা থাকলেও সেই বিবাদ কখনও মিটত না। কখনও বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তা নিয়ে বিবাদ, কখনও বিবাদের বিষয় ছিল খেত। এমন ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

বছর দু’য়েক আগে ওই গ্রামের বাসিন্দা সোয়াদ শেখের কাছ থেকে কার্তিক বারো কাঠা জমি কেনেন। ওই জমির পাশের জমি রমেশের। জমিটি জরিপ করতে গিয়ে দেখা যায়, কার্তিকের বারো কাঠা জমির মধ্যে এক কাঠা জমি রমেশের জমির মধ্যে আছে। এবং ওই এক কাঠা জমি জরিপ করে কার্তিককে বুঝিয়ে দেন সোয়াদ।

অভিযোগ, রমেশ কোনও কথা না শুনে ওই এক কাঠা জমি জোর করে নিজের দখলে রাখেন। ওই জমিটি পর পর তিন বার জরিপ করার পরেও রমেশের দখলে থাকা এক কাঠা জমি কার্তিককে ফিরিয়ে দেননি। এর মধ্যে ফের আরও এক বার জমি জরিপ করে রমেশের দখলে থাকা এক কাঠা জমিতে আল দেন কার্তিক।

অভিযোগ, শনিবার সকালে ওই জমিতে আমন ধানের চাষ করার জন্য হাল দিতে গিয়ে ফের রমেশ ও তাঁর ছেলেদের বাধার মুখে পড়তে হয় কার্তিকের ছোট ছেলে রূপন হাজরাকে। রূপনকে মারধরও করা হয়। কিন্তু খেতের মধ্যে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দেওয়ায় সেই বিবাদ বেশি দূর গড়ায়নি। রূপন বাড়ি ফিরে আসতেই রমেশের ছেলেরা ফের কার্তিকের পরিবারের উপর চড়াও হন। লোহার রড, লাঠি নিয়ে তাঁরা বেধড়ক মারধর শুরু করেন। সেই সময় পাল্টা প্রতিরোধ করেন কার্তিকের ভাই মাধব ও ছেলে রূপন।

অভিযোগ, ওই দু’জনকে সামনে পেয়ে লোহার রড দিয়ে মারধর করেন রমেশের ছেলেরা। ওই ঘটনায় মাধব হাজরা-সহ উভয় পক্ষের ১৪ জন জখম হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে ভরতপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে সকলকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কান্দি মহকুমা হাসপাতালে আসার পথে মারা যান মাধব।

ওই ঘটনায় চার জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কার্তিক বলেন, “আমি যার কাছ থেকে জমি কিনেছি সে আমাকে জরিপ করে জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রমেশ ওই জমির এক কাঠা জবরদখল করে থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটল। কিন্তু সে যে আমার ভাইকে খুন করবে সেটা ভাবতেও পারিনি।”

মাধবকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করে স্ত্রী ছবি হাজরা বলেন, “আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। আমাদের পরিবারে এখনও তিন জন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আমি রমেশ ও তার ছেলেদের শাস্তি চাই।”

ওই মারপিটের ঘটনায় রমেশও জখম হয়েছেন। তাঁকেও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরে কার্তিকের ছেলে রতন হাজরা পুলিশের কাছে পরিকল্পিত ভাবে খুন ও মারপিটের অভিযোগ করেছে। তবে রমেশের পরিবার খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাঁদের দাবি, নিজেদের মধ্যেই মারপিটের কারণে মাধব মারা গিয়েছেন।

জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে দুই পরিবারের মধ্যে মারপিট হয়েছে। এক জন মারাও গিয়েছেন। ওই ঘটনায় এক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Death Land Dispute Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy