নেই বাধা। নিজস্ব চিত্র
রবিবারের সকাল। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সাপ্তাহিক সাফাইয়ের কাজ চলছে। দৈনিক তৎপরতা তখনও শুরু হয়নি। এমন সময় পথ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত এক ব্যক্তির দেহ নিয়ে হাজির হয় পুলিশ। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশ অফিসারের কথার ফাঁকেই গাড়ি, বাইকে দলে-দলে উত্তেজিত মানুষ হইহই করে ঢুকে পড়ল হাসপাতাল ভবনে। কয়েক মিনিটের মধ্যে গোটা হাসপাতালে দাপিয়ে বেড়াতে লাগলেন মৃতের সেই ‘আত্মীয়-বন্ধুরা’। তাদের হাঁকডাকে ত্রস্ত চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী এবং অন্য রোগীর বাড়ির লোকজন। চরম বিশৃঙ্খল সেই পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালের দুই বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীর নিতান্ত অসহায়ের মতো সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হাসপাতাল সাফাই ও রোগী পরিষেবা কার্যত লাটে ওঠে। ঘণ্টাচারেক পর মৃতদেহ নিয়ে বাড়ির লোক ময়নাতদন্তের জন্য শক্তিনগরের দিকে রওয়া হলে শান্ত হয় পরিবেশ।
নদিয়া-বর্ধমানের সীমান্ত ঘেঁষা প্রতাপনগরে অবস্থিত নবদ্বীপ ষ্টেট জেনারেল হাসপাতালের এই ছবি নতুন কিছু নয়। মাঝে মাঝেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় এখানে। নিরাপত্তার দাবিতে এনআরএস থেকে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এবং তার পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠকের পরে নবদ্বীপের পরিস্থিতি বদলাবে বলে ক্ষীণ আশার জায়গা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এখনও কিছুই পাল্টায়নি।
নদিয়া ও বর্ধমানের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে রোগীর চাপ প্রবল। তুলনায় নিরাপত্তা প্রায় কিছুই নেই। হাসপাতালে ওয়ার্ড তিনটি। এ ছাড়া আছে জরুরি বিভাগ এবং ব্ল্যাডব্যাঙ্ক। এর মধ্যে ব্ল্যাডব্যাঙ্ক এবং আইসোলেশন ওয়ার্ড মূল ভবন থেকে আলাদা। এই হাসপাতালের এই মুহূর্তে নিরাপত্তা রক্ষী আছেন মাত্র ১৫ জন। তিন জন করে এক-একটি শিফটে কাজ করেন। ভিড়ের চাপের নিরিখে এই সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। এবং রোগী থেকে চিকিৎসক—প্রত্যেকেরই মত, উত্তেজনার পরিস্থিতিতে এখানে কেউ নিরাপদ নয়। যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও বড় অঘটন ঘটতে পারে।
নবদ্বীপ হাসপাতালের সুপার বাপ্পা ঢালি বলেন, “নিরাপত্তার সমস্যা এখানে বহুমুখী। যেমন নবদ্বীপ হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্কে এক জনও রক্ষী নেই। যদিও হিসাব মতো থাকার কথা চার জনের। কিন্তু আমরা এক জনও পাইনি। নিয়মমতো সাধারণ রোগীর সঙ্গে এক জন এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীর সঙ্গে দু’জন বাড়ির লোক ঢুকতে পারেন। সেই জায়গায় এখানে এমনিতে ছয়-সাত জন ঢুকে পড়েন। কেউ আটকানোর নেই। আর কোনও বিশেষ ঘটনা হলে দলে-দলে লোক হাসপাতালে ঢুকে পড়াটাই এখানে রেওয়াজে পরিণত। হয়ত লোকে মনে করে, দলবেঁধে গিয়ে চিৎকার করে চিকিৎসকদের ভয় পাওয়ালে চিকিৎসা বেশি ভাল হবে!’’
বিশেষ করে রাতবিরেতে কোনও রোগীর সঙ্গে অনেকে এলে সবচেয়ে আতঙ্কে থাকেন নার্সরা। কারণ, সেই সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে যাঁরা ভিড় করেন তাঁরা প্রকৃতস্থ থাকেন না। এ অবস্থায় রোগীকে ইঞ্জেকশন দিতে বা স্যলাইনের চ্যানেল করতেও ভয় পান নার্সরা।
নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রবেশের মুখে মূল কোলাপসিবল গেটের ভিতরেই জরুরি বিভাগ। রাতে ওই গেটে দু’জন করে রক্ষী থাকেন। কিন্তু থাকলে কি হবে। এক রক্ষীর কথায়, ‘‘গেটে আটকালেই খবর চলে যাবে নেতাদের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনে-ফোনে জেরবার। আর কোনও নেতা নিজে এলে তো কথাই নেই। হাসপাতাল করিডর নাকি ভিড়ের হাওড়া স্টেশন তখন বোঝে কার সাধ্য!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy