বাঘের ঘরেই ঘোঘের বাসা!
নির্বাচনে এ যাবত নির্ভয়ে ভোট দিতে পেরেছেন কি না, সে কথা জানতেই দুয়ারে টোকা মারার কথা তাঁদের। গত কয়েকদিন ধরে কল্যাণী লাগোয়া গয়েশপুর, সগুনার দোরে দোরে এ ভাবেই ঘুরেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সেক্টর কমিটির কর্মীরা। তবে ভোটের কোনও তিক্ত হুমকি, চোখরাঙানির উল্লেখ মেলেনি তাঁদের রিপোর্টে। যা দেখে বাঁকা হাসছে সিপিএম। বলছে— গত বিধানসভা নির্বাচনে গয়েশপুরে কেউ ভোট দিতে পেরেছেন বলেই জানা নেই। আর তাঁরাই কি না জানিয়েছেন, নির্বিঘ্নে কেটেছে ভোটের দিন?
সিপিএমের অভিযোগ, গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে ওই এলাকায় ভোটের নামে প্রহসন চলেছে। অথচ সেখানকার বাসিন্দারা কোনও অভিযোগ করেননি, তা কখনও হতে পারে? তাঁদের দাবি, শাসক দলের ঠিক করে দেওয়া পরিবারগুলির দরজাতেই কড়া নেড়েছিলেন এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্টর কমিটির কর্মীরা।
শুধু তাই নয়, ভোটদানে উৎসাহ বাড়ানোর জন্য যে সচেতনতা কমিটি তৈরি করা হয়েছে, তার সদস্যদের বিরুদ্ধে শাসকদলের হয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে। ওই কমিটিতে তৃণমূল সমর্থক, পার্শ্বশিক্ষকদের রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে সিপিএম সরাসরি মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। সেই অভিযোগ জেলাশাসক হয়ে চাকদহের বিডিও-র কাছে এসে পৌঁছেছে। কারণ, এই কেন্দ্রের নির্বাচনী আধিকারিক তিনিই। বিডিও-র দাবি, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। সিপিএমের অভিযোগ, মানুষ যে স্বেচ্ছায় তাদের ভোট দেবে না, তা বুঝে গিয়েছে তৃণমূল। সেই জন্য তারা নির্লজ্জ ভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের নিয়েই সেক্টর কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা। ভোটারদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া যে, তাঁরা বিগত নির্বাচনগুলিতে ভোট দিয়েছিলেন কি না? ভোট দিতে কোনও সমস্যা হয়েছিল কি না। সমস্যা হলে, তা কী ধরনের। আর ভোট না দিলে তার কারণ কী? ভোটারদের সঙ্গে পুরো কথোপকথনই ভিডিও করে রাখাই নিয়ম। এমনকী, যাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে, তাঁদের ছবিও তুলে রাখতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নজরে কল্যাণী বিধানসভার সব বুথই স্পর্শকাতর। তার অধিকাংশই আবার অতি স্পর্শকাতর। এই স্পর্শকাতরতার কারণ অবশ্য শাসক দলের অতিসক্রিয়তা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এটা অবশ্য বাম আমল থেকেই চলে আসছে। শাসকদল বদলালেও তাদের ভূমিকা বদল হয়নি। ফলে একদিন যাঁরা অভিযোগকারী ছিলেন এখন তাঁরাই অভিযুক্তের আসনে।
সিপিএমের কল্যাণী জোনাল কমিটির সম্পাদক সোমেশ কংশবণিক মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ওই এলাকায় যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে না। সোমেশবাবুর অভিযোগ, কয়েকদিন আগে কল্যাণীর গয়েশপুরে সেক্টর কমিটির সদস্যেরা ভোটের বিষয়ে খোঁজখবর করতে গিয়েছিলেন। গয়েশপুরের কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর তাঁদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, কোন কোন বাড়িতে তাঁরা যাবেন। তাঁদের ঠিক করে দেওয়া বাড়িতেই যান সেক্টর কমিটির সদস্যেরা। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও ছিলেন।
ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অলোকেশ দাস বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফ থেকে সেক্টর কমিটির সদস্যদের নির্দেশ দিয়েই পাঠানো হয়েছিল। আর সেই কারণেই তাঁরা এসে তৃণমূলের কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তৃণমূল নেতাদের ঠিক করে দেওয়া বাড়িতে যদি তাঁরা যান, আর সেই সময় যদি সেই নেতারা ভোটারদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে সঠিক তথ্য কী ভাবে জানা যাবে? একে প্রহসন ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়।’’
ভোটারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য রয়েছে সচেতনতা কমিটি। কমিটির সদস্যদের কাজ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দেওয়া। সোমেশবাবুর অভিযোগ, এই কমিটিতে বেশ কিছু পার্শ্বশিক্ষকদের রাখা হয়েছে, যাঁরা সরাসরি তৃণমূলের কর্মী। তাঁরা ভোটারদের নানা ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা ভোটারদের কাছে জানতে চাইছেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তাঁরা জানেন কি না? আসলে এ ভাবে তাঁরা শাসক পক্ষের হয়ে প্রচার করে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে যাইনি যে, ছল-কপটতার আশ্রয় নিতে হবে। ওঁরা মনগড়া নানা মিথ্যা বলে নির্বাচন কমিশনকে ব্যস্ত রাখতে চাইছেন। মানুষ যে এখনও ওঁদের ক্ষমা করেনি, সেই প্রমাণ পেয়ে আগে থেকেই হারার অজুহাত খাড়া করছে।’’
চাকদহের বিডিও নীতিশ ভাস্কর পাল বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরেই ওই ভিডিও ফুটেজগুলি পরীক্ষা করেছি। কিন্তু সেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের লোককে দেখা যায়নি। তবে অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন ওই এলাকায় ফের নতুন করে অন্যান্য বাড়িতে গিয়ে ফের ভিডিওগ্রাফি করা হবে। অন্যান্য যে সব অভিযোগ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। সরকারি কর্মীদের কোনও ভাবে প্রভাবিত হওয়ার কথা নয়। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ীই ভোট হবে। অন্যথা হতে দেওয়া যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy