Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

অগ্নিনির্বাপক নেই, ঝুঁকি হাসপাতালে

গত ১১ অক্টোবর সকালে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সিটি স্ক্যান ঘরে এসি মেশিনে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দমকলে‌র ইঞ্জিন আসতে আসতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

এখানেই লাগানো ছিল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। বর্তমানে সে জায়গা ফাঁকা। রবিবার কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

এখানেই লাগানো ছিল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। বর্তমানে সে জায়গা ফাঁকা। রবিবার কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৬
Share: Save:

আগুন লেগেছিল প্রায় মাস দুয়েক আগে। সেই আগুন নেভাতে খরচ হয়ে গিয়েছিল প্রায় সমস্ত অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। তার পর থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল যেন জতুগৃহ হয়ে আছে। কেননা, এখনও পর্যন্ত সেই সব অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার রিফিল করে লাগানো হয়নি। ‘স্প্রিঙ্কলার’ থেকে শুরু করে ‘হোস রিল’ কাজ করছে কি না তা আদৌ জানেন না দমকল বাহিনীর কর্তারা। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। আর সেটা নিয়েই শুরু হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পূর্ত দফতরের মধ্যে টানাপড়েন।

গত ১১ অক্টোবর সকালে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সিটি স্ক্যান ঘরে এসি মেশিনে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দমকলে‌র ইঞ্জিন আসতে আসতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরা হাসপাতালের দেওয়াল থেকে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার খুলে নিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আগুন নিভে গেলেও বেশ কিছু ফাঁকফোকর সে বার সকলের সামনে এসেছিল। যেমন, আগুন নেভানোর জন্য হাসপাতালে যে আন্ডারগ্রাউন্ড রিজ়ারভয়্যার আছে, তাতে প্রায় দেড় লক্ষ লিটার জল ধরে। কিন্তু সে দিন রিজ়ারভয়্যারে এক ফোঁটা জল ছিল না। শুধু তা-ই নয়, স্প্রিঙ্কলার কাজ করেনি। বাজেনি ফায়ার অ্যালার্ম। দমকল কর্তারা সে দিনই বলেছিলেন, কোটি টাকা খরচ করে পরিকাঠামো তৈরি করলেও সেই পরিকাঠামো কাজ করেনি। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণও করা হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বর্তমানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। কারণ এত বড় একটা জেলা হাসপাতালে বহু অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার নেই। এই অবস্থায় আগুন লাগার দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “বর্তমানে গোটা হাসপাতালটাই যেন একটা আস্ত জতুগৃহ। কেবলই মনে হয় যদি কোনও কারণে আগুন লাগে, তা হলে কী করব? কী হবে এত গুলো মানুষের?”

এই হাসপাতালে গত কয়েক বছরে বারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বারই অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ব্যবহার করে প্রথমে তা নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিরাপত্তারক্ষী ও অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। নিরাপত্তারক্ষীদের কথায়, “অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার থাকলে না-হয় আমরা দমকল না আসা পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু এখন তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।”

গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন দমকল কর্তারা। আগের অগ্নিকাণ্ডের পরেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ঠিক কী অবস্থায় আছে, কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে এসেছিল দমকল বাহিনী। কিন্তু সে দিনও রিজ়ারভয়্যারে জল না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। তাদের ফিরে যেতে হয়েছিল। উল্টে পূর্ত (সিভিল) দফতরের কর্তারা বলেছিলেন, সব কিছু ঠিকঠাক করে, জলের ব্যবস্থা করে তাঁরা দমকলকে খবর দেবেন। কিন্তু এত দিনেও সেই ডাক তাঁরা পাননি।

কৃষ্ণনগর দমকল বাহিনীর ওসি শক্তিরঞ্জন দে বলছেন, “২০১৬ সাল থেকে আমি নিজে বারবার গিয়ে কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাকে ঠিকঠাক করতে বলে আসছি। শেষ বার যখন আগুন লাগে, তখনও কিন্তু সব কিছু ঠিক মতো কাজ করেনি। এখনও যদি সেই একই অবস্থায় রেখে দেওয়া হয় যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।” তাঁর মতে, “প্রতি পাঁচশো বর্গফুটে একটা করে সিলিন্ডার থাকার কথা। যত দ্রুত সম্ভব সেঅ ব্যবস্থা করা উচিত।”

কিন্তু কেন এই হাল? কেন এখনও ফুরনো সেই সব সিলিন্ডার রিফিল করে আনা গেল না?

হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের বক্তব্য, “অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রিফিল করার দায়িত্ব পূর্ত (সিভিল) দফতরের। আমরা সেই মতো তাদের জানিয়েও দিয়েছি।” পূর্ত (সিভিল) দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র নিধুরাম বিশ্বাস বলেন, “রিফিল করার জন্য টেন্ডার ডেকে কোটেশনও তৈরি করে রেখেছি। কিন্তু তার খরচ দেবে স্বাস্থ্য দফতর। তারা টাকা দিলেই আমরা কাজটা করে ফেলব।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব, এই সমস্যার সমাধান করে ফেলা হবে। ইতিমধ্যে সেই মতো পদক্ষেপও করা হচ্ছে।”

সরকারি গড়িমসির ফাঁকেই আবার একটা অঘটন ঘটে না যায়!

অন্য বিষয়গুলি:

Fire extinguisher Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy