বাজেয়াপ্ত হওয়া বাজি। রবিবার চাকদহে। নিজস্ব চিত্র
গাংনাপুর রেল স্টেশনে ব্যাজার মুখে দাঁড়িয়ে এক স্কুল পড়ুয়া। প্রশ্ন করে জানা গেল, কালীপুজোর জন্য বাজি কিনতে এসেছিল। কিন্তু শব্দবাজির জন্য বিখ্যাত গাংনাপুরে খোলাই ছিল না কোনও বাজির দোকান!
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাংনাপুরে বাজি কিনতে গিয়ে অনেকেই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওই এলাকার এক বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যুর পরে পুলিশি কড়াকড়ির জেরে সে ভাবে বাজি বিক্রি হচ্ছে না। তবে গাংনাপুরের বাজারের মন্দার সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়ার বাজি ব্যবসায়ীরা। রানাঘাটের এক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘প্রথম দিকে গাংনাপুরে শব্দ বাজি না পাওয়ায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছিল। এখন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হাওড়া সেই অভাবে মেটাচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে গাংনাপুর থেকে চার কিলোমিটার দূরে ঘোলা বাজার এলাকায় বাজি বিক্রি করার অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রথম দিকে দু-চার জন বাজি বিক্রি করলেও ওই ঘটনার পরে তাঁরাও দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাজি বিক্রি না হওয়ায় কালীপুজোয় শব্দ দানবের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক বাসিন্দা আনন্দ হালদার বলেন, “কালীপুজোয় অনেক রাত পর্যন্ত বাজির শব্দ পাওয়া যায়। ঠিক মতো ঘুমোনো যায় না। এতে সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে যাঁদের বাড়িতে শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা রোগী রয়েছেন।’’
তবে চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি বিবর্তন ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করছেন, অন্য জেলা থেকে আসা বাজিই শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাবে। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না, বাজারে বাজির কোনও ঘাটতি হবে। সেটা কালীপুজোর দিনই পরিষ্কার বোঝা যাবে।’’
বছর চল্লিশেক আগে রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংনাপুরে প্রথমে একটি বাজি কারখানা তৈরি হয়েছিল। বাজির ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় কারখানার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখানকার বাজি বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ভাবে বিক্রি হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে বাজি কিনে নিয়ে যেতেন।
এখানে বাজি তৈরি তো হতই। এ ছাড়াও উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া থেকে বাজি নিয়ে এসে বিক্রি করা হত। এখন সে সব বন্ধ। এক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের কাছ থেকে অনেক ব্যবসায়ী বাজি কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতেন। বাজি কেনার জন্য তাঁরা ফোন করছেন। কিন্তু বাজিই তো নেই। দেব কী?’’ তাঁর বক্তব্য, বিস্ফোরণের পরে পুলিশের কড়াকড়িতে ব্যবসা মার খেয়েছে। যাঁরা বাজি কিনতে আসছেন, তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বাজি নেই।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণে কারখানার মালিক মিঠু মণ্ডল এবং কারখানার কর্মী রঞ্জিত বিশ্বাস মারা যান। গত কয়েক দিন জেলার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে পুলিশ বাজি আটক করছে। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজোর আগে জেলার সর্বত্র অভিযান চালানো হচ্ছে। বাজি-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ভাবেই তল্লাশি চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy