ছবি রয়টার্স।
ব্যবহারের পর প্লাস্টিকের জলের বোতল নির্দ্বিধায় যত্রতত্র ফেলে দেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সকলেরই। তাতে পরিবেশ বা প্রকৃতির কী ক্ষতি হল— তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়? কিন্তু ওই বোতলটি আস্ত ফেরত দিলে যদি নগদ টাকা পাওয়া যায়, তা হলে নিশ্চয়ই আর কেউ যেখানে-সেখানে ছুঁড়ে ফেলবেন না ব্যবহার করা প্লাস্টিকের বোতল?
রাজ্যে প্রথম হেরিটেজ শহর হতে চলা নবদ্বীপকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে এ বার পদক্ষেপ করছে নবদ্বীপ পুরসভা। নতুন বছরের গোড়াতেই চালু হয়ে যাবে এই ব্যবস্থা। সেইমতো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এর আগে কলকাতা মেট্রো, ভারতীয় রেল স্টেশন-সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সেই তালিকায় নতুন নাম যোগ করল পর্যটন শহর নবদ্বীপ।
বিষয়টি প্রসঙ্গে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “আধুনিক সভ্যতার সব চেয়ে বড় অভিশাপ প্লাস্টিক। তাকে ঠেকাতে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে পুর প্রশাসনের তরফে। নবদ্বীপকে প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য নতুন ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছি আমরা।’’
তিনি আরও জানিয়েছেন, জল এখন বোতলে খেতেই অভ্যস্ত মানুষ। সেই বোতল চতুর্দিকে ছড়িয়ে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। আগামিদিনে ওই বোতল পুরসভা সামান্য অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করবে। এতে এক দিকে যেমন দূষণ কমবে, তেমনই এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে বেশ কিছু কর্মসংস্থান হবে।
শহরে প্লাস্টিক-দূষণ রুখতে অভিনব এই পরিকল্পনা রূপায়নের দায়িত্ব অনেকটাই বর্তেছে পুরসভার ষোলো নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিতাই দাসের উপরে। তিনি জানান, পুরসভার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।
কী ভাবে কাজটি করা হবে, তা ব্যাখ্যা করে নিতাইবাবু বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য প্লাস্টিকের পরিমাণ হ্রাস করা। সে ক্ষেত্রে যে সব জায়গায় এই প্লাস্টিক বোতলগুলি তৈরি হয়, সেখানে যদি ব্যবহৃত বোতলগুলি বিপুল পরিমাণে ফেরত পাঠানো যায়, তা হলে নতুন প্লাস্টিক বোতল উৎপাদন করার পরিবর্তে এইগুলিই পুনর্নবীকরণ করে বাজারে ফিরবে। তাতে দুই রকমের লাভ। আমরা পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছি। অন্য দিকে, নতুন করে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমছে।”
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বোতলগুলির একটি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন পাঁচ লিটারের বোতল পাঁচ টাকা, দুই লিটারের দু’টাকা, এক লিটারের এক টাকা। এই পরিমাণ টাকা মিলবে অক্ষত বোতল ফেরত দিলে। জানা গিয়েছে, ফেরত নেওয়ার কাজ হবে দুই ভাবে। এক, বিক্রেতা নিজেই অর্থের বিনিময়ে ফেরত নেবেন বোতলগুলি। তাঁর মাধ্যমে পুরসভায় আসবে। দুই, বোতল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি যাবেন এই প্রকল্পের কর্মীরা। বিশেষ করে, বাজার, হাট অঞ্চলে। তাঁদের কাছে সরাসরি মূল্যের বিনিময়ে বোতল ফেরত দেওয়া যাবে। ওই সংগৃহীত বোতল নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছলে তা চলে যাবে উৎপাদন কারখানায়।
পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের জয়দীপ হালদার বলেন, “নবদ্বীপ শুধু রাজ্যের প্রথম হেরিটেজ শহর নয়, এই ভাবে প্লাস্টিকমুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রথম পথ প্রদর্শক হতে চলেছে।”
চৈতন্যধামে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহারকারী ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে আর্থিক জরিমানার করার কথা সম্প্রতি ঘোষণা করছে পুরসভা। সেই মর্মে শহর জুড়ে প্রচারও শুরু হয়েছে। এর আগে একাধিক বার অভিযান চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার প্লাস্টিকের দ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু মানুষের তাতে হুঁশ ফেরেনি। একটু ঢিলে দিলেই নিঃশব্দে শহর ভরছে প্লাস্টিকে। প্রশাসনিক পদক্ষেপের ক’দিন পর ভয় কাটলেই শহর জুড়ে ফের জাঁকিয়ে বসছে প্লাস্টিক।
ফেলো প্লাস্টিক বোতল, মাখো তেল— নতুন এই প্রক্রিয়া কতটা কার্যকরী হয়, তা অবশ্য সময় বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy