সবে মিলি: জলঙ্গির মনসাতলায়। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
আসরের নমাজ শেষ করেই মন্দিরের বারান্দায় এসে বসলেন হামিদ মন্ডল। তখনও তাঁর সাদা ফেজ টুপিটা মাথায় আঁটোসাঁটো বসে। গ্রামের নকুলচন্দ্র সাহা, আসমত মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে মেলা থেকে কিনে আনলেনন গরম জিলিপি, ভাগ করে খেলেন সকলে মন্দিরের চাতালে বসেই— ছবিটা নতুন নয়। তবে, সম্প্রীতি নিয়ে দেশজুড়ে উত্তাপের আবহে, জলঙ্গির মনসাতলা কিন্তু একটুও মচকাইনি। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি ৮০ বছরের সংস্কৃতি কি কখনও ভাঙা যায়। জলঙ্গির সরকার পাড়া গ্রামের সকলে সমস্বরে বলছেন— ‘এখানকার মনসা পুজোর মেলা তো টিকি আর ফেজ টুপিতে মিলেমিশে এক হয়ে আছে!’
তখনও দেশ দু’টুকরো হয়নি। সেই সময়ে বাংলাদেশ থেকে জলঙ্গির এই জনপদে উঠে এসেছিল গুটিকয়েক পরিবার। অনেক কিছু ছেড়ে এলেও সেই পরিবারের সঙ্গে ওপার থেকে এসেছিল মনসা। আর এপারে এসে রাজ্য সড়কের পাশে ছোট্ট একটি চালা ঘরে ঠাঁই হয়েছিল তার। পরে মনসার সৌজন্যে সেই এলাকার নাম হয় মনসাতলা। পদ্মা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে, বদলে গেছে মনসাতলা চেহারাটাও, এলাকার অনেক হিন্দু পরিবার মনসতলা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন করিমপুর, বহরমপুরে। কিন্তু মনসার পূজো বন্ধ হয়নি, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এই পুজো কমিটিতে ৬৫ জন সদস্যের মধ্যে ৬২ জনই মুসলিম। তাদের হাত ধরেই প্রায় ১৫ দিনের মেলা চলে নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে।
পুজো কমিটির সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, সভাপতি মহাদেব বিশ্বাস। পুজোর চাঁদা তোলা থেকে পরিচালনা সবটাই করেন তারাই। কমিটির প্রবীণ সদস্য ৮৭ বছরের নকুলচন্দ্র সাহা বলছেন, ‘‘একটা সময় বাংলাদেশ থেকে আসা প্রভাষচন্দ্র বিশ্বাস ও ফাকিরাম মন্ডলদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল মনসা পূজো। আর এখন মহাদ্দেস ইকবালদের হাতেই দায়িত্ব মনসার।’’ ৮০ বছরে সে পুজো নিয়ে সম্প্রীতির ঘাটতি হয়নি। একই কথা বলছেন ওই পুজো কমিটির সহকারি সম্পাদক ইকবাল আহমেদ। তাঁর কথায়, ‘‘মনসাতলার সংস্কৃতি হচ্ছে মিলেমিশে থাকা, আর এখানকার মনসা পুজোয় অনেক মুসলিম পরিবার মানত করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy