তবলা পরিষ্কার করছেন সন্তোষ।
বিকেলের দিকে চেয়ে দিন কাটত। সূর্য ঢলে পড়লে তাঁরা ঘরের জানলা খুলতেন। ভাল চাদর পাততেন। কেউ আবার বেরোতেন সাইকেলটা নিয়ে। গুনগুন করতেন, ‘‘এই স্বর্ণালী সন্ধ্যায়।’’ কখনও সুরের কলি ভাঁজতে ভাঁজতে চলে যেতেন কেউ কয়েক কিলোমিটার। তার পরে বসত সঙ্গীত শিক্ষার আসর। হরিহরপাড়ার গলি, রাস্তা থেকে ভেসে আসত কখনও এক টুকরো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, কখনও মান্না দে, কখনও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কেউ আবার শেখাতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। কারও হাতে থাকত গিটার। এমন ভাদ্রের মুখ ভার করা বিকেলে ভেসে আসত পিট সিগার কিংবা হ্যারি বেলাফন্টে। অথবা, কুইন।
শুধু বাচ্চাদের গান বা তবলা, গিটার শেখানোই নয়। মফসসলের এই শিল্পীদের ডাক আসত নানা অনুষ্ঠানে। সেখানে গান গেয়ে যে রোজগার হত, তা দিয়েই হাঁড়ি চড়ত। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেত।
কিন্তু করোনা আবহে বন্ধ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত সব অনুষ্ঠান। বন্ধ গান, তবলা শেখানো বা ছবি আঁকার ক্লাসও। ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে অধিকাংশ শিল্পী ও শিল্পী তৈরির কারিগরদের ভরসা মাসিক এক হাজার টাকা শিল্পী ভাতা আর রেশনের দোকান থেকে পাওয়া খাদ্যসামগ্রী। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন চলতে পারে? দিশেহারা অবস্থা অনেক দুঃস্থ শিল্পী ও শিল্পী শিক্ষকদের।
হরিহরপাড়ার গজনীপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির সন্তোষ দেবনাথের ধ্যানজ্ঞান তবলা বাজানো। স্ত্রী, ছেলে,বৌমা আর নাতনিকে নিয়ে সংসার তাঁর। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তবলায় সঙ্গত দিয়ে যা পারিশ্রমিক পান আর জনা চল্লিশ ছাত্রকে তবলা শিখিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। এখন সব বন্ধ। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ মাস ধরে অনুষ্ঠান বন্ধ। বন্ধ
রয়েছে টিউশনও।’’
নওদার পাটিকাবাড়ির বাসিন্দা সমীর চক্রবর্তী সঙ্গীত শিল্পী। কীর্তন ও গান গেয়ে এবং গানের টিউশন করিয়ে সংসার চালান। সমীর বলেন, ‘‘সংসার চালানো অসাধ্য হয়ে উঠেছে।’’ তার বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী ও পাঁচ হাজার টাকাও পৌঁছে দিয়েছেন নওদা থানার ওসি মৃণাল সিংহ।
হরিহরপাড়ার সঙ্গীত শিল্পী আমেদ আলিরও এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের গান শিখিয়ে চলে সংসার। তাঁরও রোজগার বন্ধ। তিনি এখন গান রচনা, গানের সুর দেওয়া, গীতি আলেখ্য রচনায় ব্যস্ত। আমেদ আলির স্ত্রী একজন আশাকর্মী। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর রোজগারে চলছে সংসার।’’
করোনায় অন্য অনেক পরিবারের রোজগার বন্ধ। তাই লকডাউন উঠলেও টিউশন ফেরত আসবে কি না, তা-ও জানেন না তাঁরা। তবু তার মধ্যেই তঁাদের এক জন বলছেন, ‘‘কত কষ্ট করে সুর তুলিয়েছিলাম কত জনের। অভ্যাস না থাকলে ওরা সবাই তা ভুলে যাবে। এটাও কম ক্ষতি নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy