ওদের জন্য ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা।
তবে, আটঘাট বেঁধে সে ব্যবস্থা শুরু করতে বেশ খানিকটা দেরিই করে ফেলেছে তারা।
চলতি মাসের মধ্যে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের ‘স্পেশ্যাল ক্লাস’ বা বিশেষ ক্লাস নিয়ে তাদের কতটা এগিয়ে দেওয়া যাবে, এখন প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।
রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের নবম শ্রেণির একটু পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের বিশেষ ক্লাসের (রেমেডিয়াল টিচিং) মাধ্যমে মানোন্নয়নের চেষ্টা করতে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান। রাজ্যের লক্ষাধিক পড়ুয়ার মানোন্নয়ন ঘটাতে গত তিন মাস ধরে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। নদিয়া, সে কাজটাই শুরু করল ডিসেম্বরের গোড়ায়।
অথচ, শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক আগে আসা ওই নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল— এ বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। অন্য জেলাগুলি সে কাজে হাত দিয়েছে আগেই। কিন্তু নদিয়ায় এমন বিলম্ব কেন?
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের নদিয়া জেলা প্রকল্প আধিকারিক সচ্চিদানন্দ বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে ওই নির্দেশিকা এসেছে পুজোর আগে। তার পরে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে দিন কয়েক আগে। কাজটা শুরু করব কী করে!’’
তিনি জানাচ্ছেন, স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ে গিয়েছিল ইতিমধ্যে। ফলে অধিকাংশ স্কুলে ক্লাস নিতে ডিসেম্বর গড়িয়ে গিয়েছে। গত সপ্তাহে, নদিয়ার ৬০টি স্কুলের নবম শ্রেণির পঁয়তাল্লিশ হাজার ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে এই বিশেষ ক্লাস শুরু হয়েছে। ফলে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, কতটাই বা নিছক নিয়মরক্ষার, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।
নির্দেশিকা হাতে পেয়ে পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদ অবশ্য কাজটা শুরু করেছিল গত সেপ্টেম্বর মাসে। জেলায় ৫৫০০ জন ছাত্রছাত্রীকে বিশেষ ক্লাসের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সে জেলার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পারভিন। তিনি বলেন, “আমাদের জেলায় তিন মাসের বিশেষ ক্লাস নভেম্বরেই শেষ হয়েছে।” তিনি জানান, এই ধরনের ক্লাস করানোর ফলে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্টই উন্নতিও হয়েছে। তানিয়া জানান, ক্লাস শুরুর সময় পিছিয়ে পড়া ওই ছাত্রছাত্রীদের এক দফা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। প্রশিক্ষণ শেষে ফের আর এক দফা। তিনি বলেন, ‘‘অভাবিত উন্নতি হয়েছে ওই সব ছেলেমেয়ের।’’
নদিয়ার বেতাই হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় বিশ্বাসের আফশোসটা সেখানেই। তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরাও হয়তো কিছুটা সুবিধা পেত, কিন্তু গত সপ্তাহে প্রকল্পের কথা জানতে পারলাম আমরা। এখনও ক্লাসই শুরু করতে পারিনি। তা ছাড়া ২৩ ডিসেম্বর পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে। কী করে কী করব!’’
চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া শারদামণি ইলাকন্যা বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আরজুবানু চৌধুরীর কথাতেও একই সুর, ‘‘এই তো সবে জানলাম। ক্লাস শুরু করেছি দিন তিনেক হল, জানি না কতটা পারব।’’
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের ওই নির্দেশিকা বলছে— ২০১৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় যে সব স্কুলে পাশের হার ৮০ শতাংশের নিচে এবং যে সব স্কুলে নবম শ্রেণিতে একশো জনের ওপরে ছাত্রছাত্রী আছে সেই সব স্কুলকে চিহ্নিত করেই রেমেডিয়াল টিচিং শুরু হয়েছে। বিশেষ ওই ক্লাসের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ টাকা।
প্রতিটি স্কুল থেকে ৭৫ জন পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীকে চিহ্নিত করবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাংলায় , ইংরাজি এবং অঙ্কে ২৫ জন করে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীকে বাছাই করে তাদের বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে বলে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন মাসে প্রতিটি বিষয়ের ওপর ১২টি করে ক্লাস করানোর কথা। কিন্তু এই স্বল্প সময়ে তা কী করে সম্ভব তা নিয়ে এখন মাথায় হাত নদিয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy