ফাইলেরিয়ার ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে জেলার মানুষের অনীহা কাজ করছে। ২০১৮ সালে অগস্টে যেখানে জেলার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের কাছে ওই ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ওষুধ খেয়েছেন মাত্র ৬৩ শতাংশ মানুষ। এর ফলে ফাইলেরিয়া নির্মূলে মুর্শিদাবাদ জেলা পিছিয়ে পড়ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, এক টানা পাঁচ বছর জেলার ৮৫ শতাংশ মানুষকে ফাইলেরিয়ার ওষুধ খাওয়ানো গেলে মুর্শিদাবাদ ‘গোদ রোগ মুক্ত’র প্রথম ধাপে পৌঁছবে। ফলে ২০০৬ সাল থেকে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা বছরে এক বার জেলার প্রতি বাড়ি ঘুরে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে ফাইলেরিয়া ওষুধ খাওয়ান। অভিযোগ, বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সেই ওষুধ খান না। যার ফলে ফাইলেরিয়া নির্মূল করার দিক থেকে পিছিয়ে থাকছে জেলা।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ফাইলেরিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেু করারও নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্যদফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দাঁড়িয়ে থেকে ফাইলেরিয়ার ওষুধ খাওয়ানোর কথা স্বাস্থ্যকর্মীদের এবং যাঁরা ওষুধ নিচ্ছেন, তাঁদেরও উচিত স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে সেই ওষুধ খাওয়া। এমন নির্দেশ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত অগস্টে বাসিন্দাদের এই অনীহার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে জেলা।
আগামী ৮-১৩ জুলাই ফাইলেরিয়ার ওষুধ খাওয়ানোর দিন ধার্য রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে জেলার প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের হাতে ফাইলেরিয়া ওষুধ পৌঁছে দেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ফাইলেরিয়া বা গোদ নির্মূল করার জন্য বছরে এক বার করে ওষুধ খাওয়ানো হয়। জেলার একটা অংশের মানুষের মধ্যে সেই ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অনীহা কাজ করছে।’’ তাই গোদ রোগমুক্ত জেলা গড়তে স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনে ওষুধ খাওয়ার আবেদন করছেন সিএমওএইচ।
গোদ রোগ কী? কী ভাবেই বা এই রোগ ছড়ায়? জানা গিয়েছে, কিউলেক্স মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। কিউলেক্স মশা মূলত নোংরা জলে বাস করে। এ ছাড়া এই মশা ৫-১১ কিমি পর্যন্ত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে যেতে পারে। এই রোগে মানুষের শরীরের আক্রান্ত অংশ ফুলে যায়। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, গোদ মুক্ত জেলা গড়তে প্রথম ধাপে বাসিন্দাদের বছরে একবার ওষুধ খাওয়ানো হয়। বছরে একবার করে এক টানা পাঁচ বছর ৮৫ শতাংশের ওপরে মানুষ ওষুধ খেলে গোদ মুক্তর প্রথম ধাপে পৌঁছয়। এর পরে একাধিক ধাপ রয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় গোদের ওষুধ খাওয়ানো শুরু হলেও এখনও প্রথম ধাপে পৌঁছতে পারেনি।
স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জেলায় ১০৮৯ জন গোদ রোগে আক্রান্ত। তাঁদের চিকিৎসাও চলছে। কারও একবার হলে এই রোগ সারে না। তাই স্বাস্থ্য দফতরের লক্ষ্য এই রোগে যেন কেউ আক্রান্ত না হন। স্বাস্থ্যদফতরের এক কর্তার কথায়, বছরে একবার ডাইইথাইল কার্বামাজিন ও অ্যালবেনডাজোল ট্যাবলেট এক সঙ্গে খেতে হয়। এই ওষুধ স্বাস্থ্যদফতর জেলার প্রতিটি বাসিন্দার কাছে পৌঁছে দেয়। দু’বছরের উপরে যে কোনও বয়সী মানুষ এই ওষুধ খেতে পারেন। তবে গর্ভবতী মহিলা ও গুরুতর অসুস্থদের এই ওষুধ খাওয়ানো যায় না। তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy