প্রতীকী চিত্র।
স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক তরুণীর স্বামী এবং শ্বশুরকে। আগুনে পুড়ে মারাত্মক জখম হয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বছর তেইশের তরুণী মৌসুমী দেবনাথ। ঘটনাটি নবদ্বীপের প্রফুল্লনগর কলোনির।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর বাপেরবাড়ি ব্যাদরাপাড়ার মঙ্গলচণ্ডীতলায়। শনিবার তরুণীর মা বাণী রায়চৌধুরী নবদ্বীপ থানায় এই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, পণের দাবিতে তাঁর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চার বছর আগে মৌসুমী বাড়ির অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন প্রফুল্ল নগরের বাসিন্দা প্রদীপ দেবনাথকে। তিনি পেশায় মণ্ডপকর্মী। মূলত ভিন রাজ্যে কাজ করতেন। তাঁদের একটি এক বছরের মেয়ে আছে।
বাণী বলেন, “বিয়ের বছরখানেক পর আমরা শেষপর্যন্ত ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিলাম। এরপরই টাকা এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের দাবিতে মেয়েকে মারধর করা শুরু হয়। ওরা অশান্তি করে ওকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিত টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। মেয়ে বাড়ি এসে সব কিছু জানাত।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির দাবি মেনে ধারদেনা করে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার সঙ্গে খাট, ফ্রিজ, আলমারি, ফ্যান, শো-কেস দিয়ে ঘর সাজিয়ে দেন। মেয়ের আঙটি, কানের দুল, হারের লকেট-সহ বিভিন্ন জিনিস দেন। কিন্তু তাতেও তাঁর মেয়ের উপর অত্যাচার বন্ধ হয়নি।
বাণী বলেন, ‘‘আমার স্বামী হকারি করেন, আমি ব্লাউজ সেলাই করি। এর বেশি দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সেই রাগেই ওরা মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।” বাণী জানান, গত বুধবার ভোরে তাঁর মেয়ে মৌসুমী তাঁকে ফোন করে দ্রুত নবদ্বীপ হাসপাতালে যেতে বলেন। তিনি গিয়ে দেখেন, মেয়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে শক্তিনগরে স্থানান্তরিত করানো হয়। বাণী বলেন, “হাসপাতালে মেয়ে আমাকে জানিয়েছে ২৬ অগস্ট, মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ওর গায়ে আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তার আগে চরম অশান্তি হয়েছে। মারধর করছিল মেয়েকে। আমি সবই পুলিশকে জানিয়েছি। আমি চাই ওদের কঠোর শাস্তি হোক।”
শনিবার নবদ্বীপ থানায় করা অভিযোগে তিনি জামাই প্রদীপ দেবনাথ, শ্বশুর প্রাণবল্লভ দেবনাথ, শাশুড়ি আরতী দেবনাথ, ভাসুর পলাশ দেবনাথ, ননদ শেফালী দেবনাথ এবং নন্দাই বিজয় দেবনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, সবাই মিলে গায়ে আগুন লাগিয়ে মৌসুমীকে খুনের চেষ্টা করেছিল।
অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে নবদ্বীপ থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত স্বামী প্রদীপ এবং শ্বশুর প্রাণবল্লভকে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮(এ), ৩০৭ এবং ৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়। রবিবার নবদ্বীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ধৃত দু’জনকে পাঠানো হলে বিচারক তাঁদের ১২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় মৌসুমী শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy