প্রতীকী ছবি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে রাজ্য সড়কের নাম ও চরিত্র বদলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য, তাতে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের মদ বিক্রেতাদের বিশেষ লাভ হচ্ছে না। নদিয়ায় মোটে পাঁচটি ও মুর্শিদাবাদে সাতটি দোকান বাড়তি খোলা যাচ্ছে এই বদলের ফলে। বাকি দোকান ও পানশালা বন্ধই থাকছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১ এপ্রিল থেকে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের পাঁচশো মিটারের মধ্যে মদের দোকান ও পানশালা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নদিয়া জেলায় মোট ১৭০টি দোকান ও পানশালার মধ্যে ৭৬টি বন্ধ হয়েছে (ব্যবসায়ীদের মতে সংখ্যাটা ৮৯)। মুর্শিদাবাদেও মোট ১৯৩টির মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৭৬টি।
জাতীয় সড়কের উপরে রাজ্যের কোনও হাত নেই, সেগুলি কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আওতায় পড়ে। কিন্তু কোনও রাস্তাকে রাজ্য সড়কের মর্যাদা দেওয়া বা না দেওয়া রাজ্য সরকারের ব্যাপার। সেই সুবাদে প্রথমে রাজস্থান, পরে এ রাজ্য স্থির করেছে, রাজ্য সড়কের মর্যাদা পাল্টে দেওয়া হবে। সেগুলি হয় জেলা বা পুরসভার রাস্তা বলে চিহ্নিত হবে। উদ্দেশ্য, অন্তত ওই রাস্তাগুলির ধারে থাকা মদের দোকান ও পানশালাগুলি খোলা রাখা।
কিন্তু দুই জেলায় এই কৌশল যে বিশেষ কাজে দিচ্ছে না তার কারণ, দক্ষিণ থেকে উত্তরে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কই এখানে পরিবহণ ব্যবস্থার মূল ধমনী। রাজ্য সড়ক কম। ফলে, মদের দোকান বা পানশালাও জাতীয় সড়কের ধারে বেশি। সেগুলি খোলার কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই। রাজ্য সড়কের ধারে হাতে গোনা দোকান আছে, সেগুলিই খুলবে।
নদিয়া জেলা প্রশাসনের হিসেবে, রাজ্য সড়কের চরিত্র বদলের ফলে কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় দু’টি, নবদ্বীপে একটি এবং বীরনগর পুর এলাকায় তিনটি মদের দোকান খোলা যাবে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “এই হিসেবে তিনটি পুরসভা এলাকায় এখনও পর্যন্ত ছ’টি মদের দোকান বেঁচে যাচ্ছে। আরও ভাল করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মুর্শিদাবাদে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৭৬টি পানশালা ও মদের দোকানের মধ্যে শিকে ছিঁড়ছে মাত্র সাতটির। রাজ্য সরকার রাস্তার চরিত্র বদল করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরে কান্দিতে তিনটি, রঘুনাথগঞ্জে দু’টি এবং ডোমকলে দু’টি দোকান ফের খুলছে।
বীরভূমের সুলতানপুরের পর থেকে কান্দি হয়ে বহরমপুর যাওয়ার ৪৮.৩ কিলোমিটার রাজ্য সড়কের মধ্যে দুই কিলোমিটার রাস্তা কান্দি পুরসভার অধীনে রয়েছে। ওই দুই কিলোমিটার এখন থেকে পুরসভারই রাস্তা বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
একই ভাবে, বহরমপুর চুনাখালি থেকে ডোমকল পুরসভার হাতিমপুর মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রাজ্য সড়কের মধ্যে ডোমকল পুরসভার অধীনে পড়ছে সাড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তা। ওই অংশটি এ বার থেকে ডোমকল পুরসভার রাস্তা বলেই গণ্য হবে। আবার, বহরমপুর থেকে ভগবানগোলা এবং লালগোলা হয়ে জঙ্গিপুর পর্যন্ত ৬১.২ কিলোমিটার রাজ্য সড়কের মধ্যে জঙ্গিপুর শহর থেকে ওমরপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তাকে জঙ্গিপুর পুরসভার অধীনে বলে দেখানো হয়েছে। এর ফলেই কোলা যাচ্ছে সাতটি দোকান।
সোসাইটি ফর ওয়েলফেয়ার অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকার লাইসেন্সি-র মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক অনিমেষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবনাচিন্তা জানা যায়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বহরমপুরের পঞ্চাননতলা থেকে চুনাখালি পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটার রাস্তার উল্লেখ থাকলেও তার চরিত্র বদল করে কী করা হয়েছে, তাও অজানা। বহরমপুর পুর এলাকার কোনও মদের দোকান ও পানশালা এখনও খোলা যাচ্ছে না।’’
বেথুয়াডহরিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে দোকান চালিয়ে আসছেন অংশুমান দে। তিনি বলেন, “দোকান খোলার সংখ্যাটা তো খুবই সামান্য। ভাবতে পারছেন, কত পানশালা পথে বসবে! তবে রাজ্য সরকারের উপরে আস্থা রাখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy