নদীতে চুম্বক ফেলে চলছে কয়েন তোলা। ইনসেটে, দড়িতে বাঁধা চুম্বকে এ ভাবেই উঠে আসছে কয়েন। —নিজস্ব চিত্র
আশ্বিনের মেঘগুলো জড়ো হতে শুরু করলেই ওরা নদীর খোলে ওদের হুটোপুটি শুরু হয়।
সম্বৎসর নয়, ওই কয়েকটা মাস, পুজো থেকে ছট আরও একটু গড়িয়ে গেলে বড়জোর মাঘী পূর্ণিমা। শরৎ-হেমন্তটা জড়িয়ে নিয়ে নদীর ঘোলা জলে নেমে পড়া।
বয়স বড়জোর দশ-বারো। ওদের সক্কলের হাতে থানার মতো চুম্বক, সরু শক্ত দড়িতে বাঁধা।
পেটকাটিকে ঘিরে তখন জঙ্গিপুরের গঙ্গায় বাইচ চলছে। বাঙালীর ঈশ্বর ভক্তির সুখ্যাতি তো বড় কম নয়। গঙ্গার দুপাড়ে তখন হাজার হাজার দর্শনার্থী। সদরঘাটে পেটকাটির নৌকো ভিড়তেই প্রতিমাকে লক্ষ্য করে উড়ে এল এক-দুই-পাঁচেক কয়েন। লক্ষ্য ভেঙে কোনোটি পড়ল নৌকোয়, তবে সিংহভাগই গঙ্গার ওই ঘোলা জলে। আর তখনই বাল্য-ভাঙা ছেলোগুলোর কেরামতি। সটান জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা। দড়ি বাঁধা লোহার থালাটা ছুঁড়ে দিল জলে, তার পর যা ঘটল, তা রীতিমত অবাক হয়ে দেখার মতো— চুম্বক লাগানো প্রায় প্রতিটা থালার সঙ্গে উঠে আসছেজলে হারানো সেই কয়েনগুলো।
বুধবার ভোরের আলো ফোটা থেকে বেলা দশটা পেটকাটি প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত টানা ঘণ্টা ছয়েক ধরে ঘাটে ঘাটে এ ভাবেই চলল উপার্জন।
কেউ আদুল গায়ে, কারও পাতলা গেঞ্জি বা জামা, ঘন্টার পর ঘন্টা জলে ভিজে জব জব করছে।
সংখ্যায় জনা কুড়ি বালকের এই কয়েক দিনের মরিয়া হয়ে উপার্জনের চেষ্টা।
সঞ্জীব হালদার এদেরই এক জন। বাড়ি গঙ্গা পাড়েই। তার হাতের সেই থানাটার ওজন অন্তত কিলো খানেক। বলছে, “জানেন তো ওটা আসলে চুম্বক। রেডিও’র দোকান থেকে পেয়েছি।’’ গত বছর মালদহে গিয়ে পিসির বাড়িতে দাদার কাছে এ ‘বিদ্যে’ শিখে এসেছে সে। জানায়, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিনে ৩৮০ টাকা রোজগার করেছে সে। ছেলেটি বলে, ‘‘বাড়িতে লক্ষীপুজোর জন্য মাকে দেব ২০০টাকা। বাকিটা দিয়ে কালীপুজোয় পটকা কিনব।”
পাশেই দাঁড়িয়ে রাবণ মন্ডল। তার চুম্বকটা আরও ভারি। গ্যারাজ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে সেটা। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাবণের আয়?
একটু দ্বিধা, তার পরে জানায়, “বেশি না, ৬২০ টাকা পেয়েছি।’’ কি করবি এত টাকা নিয়ে? ঝটিতি উত্তর “বাবাকে দেব।”
সুজান হালদার বেশ দুর্বল। তার চুম্বকটাও অনেকটায় হালকা। মা পরিচারিকার কাজ করেন। এক ভাই দু বোন তারা। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুজানের কথা,“ ২৩০টাকা পেয়েছি। তা খরচ করব ভাইফোঁটায়।”
পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন বছর চল্লিশের শিক্ষক কাঞ্চন দাস। তিনি বললেন, “ছটপুজো, গঙ্গা পুজো, পৌষ সংক্রান্তি, মাঘী পূর্ণিমা এবং বাইচ সর্বত্রই দেখা মেলে এদের।এই সব বিশেষ দিনে দর্শনার্থী ও ভক্তরা হাজার হাজার টাকার কয়েন ফেলেন নদিতে। চুম্বক লাগিয়ে সেই সব কয়েন তোলার কায়দাটা রপ্ত করেছে ওরা। ওই কিছু আয় হয়, আর কি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy