—প্রতীকী ছবি।
বোমা তৈরি করতে গিয়ে এলাকার অনেক যুবকের প্রাণ গিয়েছে। অনেকের অঙ্গহানি হয়েছে সেই একই কাজ করতে গিয়ে। তাদের দেখার পরেও খুব বেশি পরিবর্তন আসে না সমাজে। এখনও ভোট এলেই বোমা বাঁধার কারবারে জড়িয়ে পড়ে তরতাজা যুবকেরা। কখনও এলার দাদার অনুমতিতে, কখনও আবার মোটা টাকার লোভেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে বলেই জানাচ্ছেন দুঁদে পুলিশকর্তারা। যদিও আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারিদের দাবি, মোটা পয়সা নয়, কখনও দাদাদের আব্দার কখনও আবেগ থেকেই এ সবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তারা। তবে তুলনামূলক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বোমা বাঁধার কাজ আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। তবে এখন নতুন কিছু পদ্ধতিতে নতুন ধরনের বোমা তৈরি হচ্ছে এই জেলায়। কখনও প্লাস্টিকের বল ব্যবহার করা হচ্ছে বোমার কাজে। আবার দড়ি বোমার মধ্যে প্লাস্টিক কন্টেনার ব্যবহার করা হচ্ছে বোমা সুরক্ষিত রাখতে।
একটা সময় বোমার কারবারিদের রমরমা ছিল ডোমকল জুড়ে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় সন্ধ্যা নামলেই গুড়ুম গুড়ুম শব্দে কেঁপে উঠতো এলাকা। রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত দু’পক্ষের মধ্যে। অথবা সকাল হলেই খবর পাওয়া যেত বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে কারও না কারও। মূলত খুব শক্তিশালী সকেট বোমা তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল ডোমকল। যার সৌজন্যে ডমকলের নাম হয়ে উঠেছিল ‘বোমকল’। তবে বর্তমানে সেই ডোমকলেও বোমা বাঁধার কার্যকলাপ অনেকটাই কমেছে বলেই দাবি বিভিন্ন মহলের। কেবল দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমাতেই নয়, বোমা বাঁধতে গিয়েও একাধিক প্রাণ গিয়েছে ডোমকল জুড়ে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোমার কারবার অনেকটাই বদলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বোমা বাঁধার কাজ ছেড়ে এখন অনেকেই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি এবং কেনা বেচার কাজে যুক্ত হয়েছে। তবে বোমা বাঁধতে গিয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া ডোমকলের এক যুবকের দাবি, "বিশ্বাস করুন ভাই, বোমা বেঁধে তেমন কিছু রোজগার হয় না। প্রথম দিকে কিছুটা আবেগ থেকে এ সব তৈরি করেছি আমি। পরে রাজনৈতিক দলের দাদাদের খপ্পরে পড়ে কখনও কখনও তাদের আব্দার মেটাতে বা দলের স্বার্থে চাপে পড়ে বোমা বেঁধেছি। কিছু কিছু সময় টাকার বিনিময়েও বেঁধেছি।’’
তবে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্য প্রান্তে বিশেষ করে ফারাক্কা এলাকায় নতুন এক ধরনের বোমার কারবার শুরু হয়েছে। প্লাস্টিকের বল কেটে তার মধ্যে বারুদ মসলা ঢুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বোমা। এর ফলে কারবারিদের একটা সুবিধা হচ্ছে। জলে ফেললেও নষ্ট হচ্ছে না বারুদ বা বোমাটি। তবে এই বোমা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে পুলিশকে। অনেক সময় বাগানে জঙ্গলে পুকুর পড়ে থাকা এমন বোমা বল ভেবে খেলতে গিয়ে জখম হচ্ছে শিশু কিশোররা।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, "ওই বোমাগুলি সকেট বোমার মতো বিপজ্জনক না হলেও খেলনা ভাবে খেলতে গিয়ে অনেক সময় জখম হচ্ছে ছোটরা। তা ছাড়া, এই বোমা নদী বা পুকুরের জলের তলায় পড়ে থাকলেও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে জল শুকিয়ে যাওয়ার পরে অনেক সময় খেলনা ভেবে ভুল করছে অনেকেই।’’ জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পুলিশের কাছে আরও একটা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কৌশলে বোমা তৈরি নিয়ে। দড়ি বোমার মসলা প্লাস্টিকের কৌটোয় ঢুকিয়ে তার উপরে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দড়ি।
ফলে অনেক সময় সেগুলোকে দড়ি বোমা ভেবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় করার জন্য জলে ফেলে দিচ্ছে। আর পরে সেগুলো সেখান থেকে উদ্ধার করে নতুন করে দড়ি জড়িয়ে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশ তৎপরতা যতই বাড়ুক না কেন, কারবারিরা কিন্তু থেমে নেই। নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে নিজেদের কারবারকে তারা বিস্তার করেই চলেছে। জেলা পুলিশকর্তাদের দাবি, একটা সময় কেবল নির্বাচনের সময় এই কারবারিদের নিয়ে চাপে পড়তে হতো আমাদের। কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরই অস্ত্রের কারবার চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy