—প্রতীকী চিত্র।
বছর দুয়েক আগে সৌদি আরবে কাজ গিয়েছেন কান্দির নিশিন্তপুরের মাসুদ শেখ। বছর পঁচিশের মাসুদ রিয়াদের একটি হাসপাতালে সাফাইয়ের কাজ করতেন। সৌদি থেকে মায়ের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত কথা হত। কিন্তু মাসখানেক থেকে সেই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মা রাজিলা বিবির। অসহায় মা রাজিলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ছেলেকে ফেরানোর জন্য। সোমবার রাজিলা জানান, ‘‘আমরা খুবই গরিব। এখানে কোনও কাজ নেই। তাই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। কিন্তু ছেলে যে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়বে ভাবতে পারিনি।’’ কান্দির নিশ্চিন্তপুরের মাসুদের মতো বহু বেকার যুবক বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন, জেলবন্দি হচ্ছেন। এমনকি নানা কারণে মৃত্যুও হচ্ছে। মৃতদের অনেকের দেহ বিদেশে থেকে যাচ্ছে, আবার কারও কারও দেহ প্রশাসনের সহায়তায় দেশে ফিরছে। এভাবে কখনও দেশের কোনও রাজ্যে কিংবা বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
দু’দিন আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজের প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও যাচ্ছেন। সেখানে ঠগবাজের পাল্লায় পড়ছেন, কারও জেল হচ্ছে, কারও মৃত্যু হচ্ছে, মৃতদেহ পর্যন্ত আনা যাচ্ছে না। করোনার সময়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে বলেছিলাম পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা একটা মন্ত্রক তৈরি করা হোক। কিন্তু তা আজও করেনি।’’
বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে যে পরিযয়ী শ্রমিকেরা বিপদের মুখে পড়ছেন অধীরের সেই অভিযোগ অমূলক নয়। কারণ গত কয়েক মাসে দেখা গিয়েছে কখনও অন্ধ্রপ্রদেশ, কখনও দিল্লি, কখনও মুম্বই বা কলকাতায় কাজে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। শুধু তাই নয়, বিদেশে গিয়েও আটকে পড়েছেন, এমনকি মৃত্যুও হয়েছে।
তবে শ্রম দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ গড়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ১ সেপ্টেম্বর থেকে দুয়ারে সরকার যে শিবির হবে তাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফর্ম পূরণ করে সেখানে জমা দিতে পারবেন। সেই সঙ্গে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন পরিযায়ীরা।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার সম্পাদক মতিউর রহমান বলছেন, ‘‘২০২৩ সালে বিদেশে নিখোঁজ, জেলবন্দি, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সহ ২৪ জন এবং সাতজন মৃত মিলিয়ে মোট ৩১ জনের পরিবার আমাদের জানিয়েছিল। আমরা বিদেশ মন্ত্রকের মদত পোর্টালে যোগাযোগ করে ৪ জনের দেহ দেশে ফেরাতে পেরেছি, তিনজনের দেহ বিদেশে কবরস্থ হয়েছে। বন্দি ও নিখোঁজ ২৪ জনের মধ্যে ১০ জনকে জেলায় ফেরানো সম্ভব হয়েছে। বাকি ১৪ জনকে এখনও ফেরানো যায়নি। তাঁদের ফেরানোর বিষয়ে আমরা বিদেশমন্ত্রকের পোর্টাল ‘মদতে’ অভিযোগ জানিয়েছি। সেগুলি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে বলে পোর্টাল থেকে জানতে পেরেছি।’’
এবছর চলতি মাসেই বিশাখাপত্তনম, মুম্বই, দিল্লি, মিলিয়ে মুর্শিদাবাদের ৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। এত কিছুর পরে বাইরে কাজে যান কেন? সৌদিতে নিখোঁজ কান্দির নিশ্চিন্তপুরের মাসুদ শেখের মা রাজিলা বলছেন, ‘‘পেটের টানে বিদেশে পাঠাতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy