Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

স্থানীয় ভাষায় কথা বলতাম বলে কেউ পথ আটকায়নি

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

আসগর আলি
বাসুদেবপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৬:৫৭
Share: Save:

আমার বাড়ি শমসেরগঞ্জ ব্লকের চাচণ্ড পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর। ছোট গঞ্জ বলা যেতে পারে। গ্রামের ছেলে ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো লাগত না। স্কুলে যাব বলে বাড়ি থেকে বের হলেও কোন আমবাগানে বা নদীর ধারে গিয়ে খেলতাম। তবু্ও কোনও মতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। আমার পড়াশোনা হবে না তাই আমাকে একটা চায়ের দোকানে মা কাজে লাগিয়ে দেন।

গরিবের সংসার। বাবা মারা যান আমার যখন দু’বছর বয়স। আমরা চার ভাইবোন। মা আর দিদিরা বিড়ি বেঁধে আমাদের মানুষ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি মানুষ হলাম না। ১২ বছর বয়সে আখের রস বিক্রি করতাম। সকাল থেকে সন্ধ্যা দিনমজুরি। সারা দিন কাজ করে ৬০ টাকা আমাকে দিত। তা থেকে বাড়িতে দিতাম ৫০ টাকা। এই ভাবে আমি বড় হলাম। ১৯ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর সংসারে খরচ বেড়ে গেল।

এক জনের সঙ্গে বিহারের পটনা যায় ফেরিওয়ালার কাজ করতে। সেখানে জঙ্গিপুরের প্লাস্টিকের গৃহস্থালির জিনিসের বেশ চাহিদা। পটনায় অনেক ব্যবসায়ী হকারদের মাল দিয়ে গ্রামে ফেরি করতে পাঠান। দেখলাম লাভের অংশ খারাপ নয়। তাই পাটনায় আমি থেকে যাই।

হঠাৎ লকডাউন। দ্বিতীয় দফা লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় মহাজন আমাদের চলে যেতে বলল। বাড়ি থেকে পটনার দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। কোনও গাড়ি চলছে না। তাই ঠিক করি, সাইকেলে বাড়ি যাব। রাস্তায় খাব কি, সব হোটেল তো বন্ধ। তাই বিহারের ছাতু নিলাম আর লবণ ও জল। দিনের বেলা ঘর থেকে বের হলে পুলিশ আবার ঘরে ভরে দিয়ে যাচ্ছে। তাই ঠিক করলাম ভোরের আজানের পর আমি বের হব বাড়ির দিকে। রাস্তার ধারে গাছগুলো হাওয়ায় দুলছে। তার মধ্যে দিয়ে সাইকেলে চলেছি। শহরের মুল রাস্তা ছেড়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে এগিয়ে আসি। পটনায় থেকে আমি তাদের ভাষা ভাল ভাবেই বলতে পারি। তাই আমি যে বাঙালি তা তারা বুঝতে পারেনি। পথ অনেকে দেখিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার আমার কথা শুনে বাড়ি থেকে দুটো রুটি আর তরকারি দিয়েছে। দুদিন ভালভাবে এসেছি। গোড্ডায় এসে পুলিশের হাতে পড়লাম। কান্নাকাটি শুরু করলে তারা চা বিস্কুট খাইয়ে ছেড়ে দেয়। পাঁচ দিন সাইকেল চালিয়ে বাড়ি আসি। বাড়ি এসে দেখি আমার স্ত্রী বলে ঘরে ঢুকবে না। আগে হাসপাতালে যাও সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তারপর বাইরের ঘরে থাকবে ১৪ দিন।

ভেবে দেখলাম বৌ মন্দ বলেনি। হাসপাতালে গেলাম আমার সাথী সাইকেলের উপর ভর করে। থাকলাম কোয়রান্টিনে। এখনও সুস্থ আছি। তাহলে এখানে মন লাগছে না। লকডাউন শেষ হলে যাব পটনাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy