Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
migrant workers

শুধু জল খেয়ে থাকতাম, মনে পড়ত মা’র কথা

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নগেন মণ্ডল
মহেশাইল শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০২:৫৬
Share: Save:

মুর্শিদাবাদ জেলার ছোট্ট একটি মহেশাইল। এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। নিজস্ব জমি যাঁদের আছে তারা নিজের জমি চাষ করে ফসল ফলায়। আর যাদের নিজের জমি নেই তারা কেউ ভাগ চাষি, আবার কেউ অন্যের জমিতে মজুর খেটে জীবন যাপন করে।

অভাবের কারণে আমরা তিন ভাইবোন পড়াশোনা করতে পারেনি। আমি অষ্টম শ্রেণির পর রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে লাগলাম। বাবার সংসারে কিছুটা সুরাহা হল। এরপর বেশি পয়সা রোজগারের আশায় কেরলের এরনাকুলাম চলে গেলাম। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজের ধরন আমাদের এখানকার চেয়ে ভিন্ন। তাই কিছুদিন জোগাড়ের কাজ করলাম। তারপর আমি রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দিয়েছিলাম। আয় ভালই। বেশি কাজ করলে তার ঘণ্টা হিসাবে মজুরি। তাই রোজগার ভালই ছিল। কেরলের প্রায় সব জায়গায় মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক বাসিন্দা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বেলডাঙা থেকে ফরাক্কা। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয় জাত দিয়ে বিচার হয় না কিছুরই। হিন্দু মুসলিম নই, আমরা সকলেই বাঙালি। এটাই আমাদের পরিচয়। কোন বাঙালির অসুবিধা হলে সবাই এগিয়ে যায় সেখানে।

কে কোন ধর্মের মানুষ সেখানে কেউ দেখে না। আমরা সবাই আপনজন। কাজের পর সবাই সবার খবর নিত। লকডাউনের পরেও তা হয়েছিল। আমরা এককাট্টা হলাম।

খাবার জন্য অসুবিধা শুরু হল। চাল থেকে আনাজ সব কিছু অগ্নিমূল্য। তারপর পুলিশের হয়রানি আছে। পেটের জ্বালা যে পুলিশকেও তোয়াক্কা করে না তা দেখলাম লকডাউনে। পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েও বাজার করতে হয়েছে। নির্মম ভাবে পুলিশ মারধর করত।

ভাবলাম এবার না খেয়ে মরব। আমাদের সহযোগিতা করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। এমন সময় শুরু হল, শুধু জল খেয়ে থাকতে হয়েছে। বাড়িতে কোনও কারণে মায়ের উপর রাগ করে একবেলা না খেয়ে থাকলে মা কত করে বলে খাওয়াত। এখানে কেউ খোঁজ করে না। মার কথা আজ বারবার মনে পড়ছে।

লকডাউনের মাঝে সরকার যখন আমাদের জন্য স্পেশাল ট্রেনের ব্যাবস্থা করল, তখন ভাবলাম এবার তা হলে বাড়ি যেতে পারব। তবুও নাম লেখাতে সময় লাগল তিন দিন। তারপর ট্রেনে বাড়ি ফিরে আসি। ট্রেনে খবার নেই, এমনকি পানীয় জল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অনেক কষ্টে বাড়ি পৌঁছই। গ্রামে ঢুকতেও বাধা। পনেরো দিন স্কুলে কাটিয়ে নিজের ঘরে আসি। আর যাব না বেশি পয়সার আশায়। নিজের দেশে কম পয়সা হলেও
শান্তি আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

migrant workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy