প্রতীকী ছবি
সংসার চালাতে পাড়ি দিই নাগপুরে। বাড়িতে দু’মাসে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকাও পাঠিয়ে দিই। মাস দুয়েক কাজ করার পর করোনাভাইরাসের কারণে শুরু হয় লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এক ঘরে আট-দশ জন গাদাগাদি করেই থাকতাম। ততদিনে প্রায় দেড় মাস কেটে গিয়েছে। এ দিকে আমার কাছে টাকাও শেষ। হোটেল, খাবার দোকান বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছিল। বাস, ট্রেন সব বন্ধ। ফলে বাড়ি ফিরতেও পারছিলাম না।
এক দিন ভোরে আমরা ভবানীপুর গ্রামের নয় জন জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ি বাড়ির দিকে। সম্বল কাছে থাকা হাজার দেড়েক টাকা, আর কিছুটা শুকনো চিড়ে, মুড়ি। বাকিদেরও একই অবস্থা। এ ভাবে টানা নয় দিন-রাত পায়ে হেঁটে ছত্রিশগড় হয়ে পৌছই ওড়িশা সীমান্তে। হোটেল বন্ধ থাকায় ভাত, রুটি বা ভারি খাবার কিছুই জোটেনি। রাস্তার ধারে দোকান থেকে মুড়ি, বিস্কুট, কলা বা অন্য ফল কিনে খেয়ে, আর রাস্তার ধারের কলের জল খেয়েই পৌছই ওড়িশায়। পায়ে ফোস্কা গলে ঘা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে। রাস্তায় দুই ধারে আমাদের মত অনেককেই হাঁটতে দেখেছি।এ ভাবে উদ্বাস্তুর মতো হেঁটে ওড়িশায় ঢুকি। ওড়িশায় ঢোকার পর একটি ছোট ম্যাটাডোর ভাড়া করি। কয়েক ঘন্টা ম্যাটাডোরে করে আসার পর ওড়িশা-বাংলা সীমানা। আটকে দেয় ওড়িশার পুলিশ। আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি স্কুলবাড়িতে। দু’বেলা অবশ্য ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করা হয়। তিন দিন পর ক্যাম্পটি উঠে যায়। পঞ্চায়েতের লোকজন আমাদের স্কুলবাড়ি ছাড়তে বলে। ফের হাঁটতে শুরু করি। কিন্তু ফের সীমানায় ওড়িশা পুলিশ বাংলায় ঢুকতে বাধা দেয়। খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিই।
দোকানপাট না থাকায় এ ভাবে টানা দু’দিন জল খেয়েই কাটাতে হয়। এরই মাঝে নেতাদের সাথে যোগাযোগ করি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরি। কিন্তু এই দু’দিন রোদে পুড়ে, জলে ভিজে আমাদের কাটাতে হয়। অবশেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমরা বাংলায় ঢুকি। ফের টানা দুদিন হেঁটে খড়্গপুরের কাছে পৌঁছই। রাতে রাস্তার ধারে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে বাড়িতে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলি। বাড়ির লোকজন প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকাও পাঠায়। স্থানীয় এক সাইকেল দোকানির হাতে পায়ে ধরি। খড়্গপুরে ছটি নতুন সাইকেল কিনে পালা করে ৯ জন ফের বাড়ির পথে রওনা দিই। বর্ধমান সীমান্তে ফের আটকে পড়ি। হরিহরপাড়া থানার পুলিশের হস্তক্ষেপেছাড়া পাই। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা সীমান্তে ফুটিসাঁকো এলাকায় পৌছই। সেখানে একটি ম্যাটাডোর ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। অবশেষে প্রায় কুড়ি দিনের মাথায় বাড়ি পৌঁছই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy