Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কুমকুম ফেটে পাঞ্জাবিতে কুসুমরাগ

বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক, সত্তর ছুঁই-ছুঁই মনোজ চক্রবর্তী তখন নেহাতই কিশোর। বহরমপুর ভট্টাচার্য পাড়ার বর্ধিষ্ণু ঋষি মণ্ডলের তখন অর্থ, আধিপত্য, আভিজাত্য সব দিকেই বেজায় জাঁক।

বহরমপুরে দ্বিতীয় দোল। নিজস্ব চিত্র

বহরমপুরে দ্বিতীয় দোল। নিজস্ব চিত্র

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

অনেক দিন আগের কথা। গোয়ালজান পাড়ার ভবতোষ ভট্টাচার্য অসুস্থ কাকাকে নিয়ে বহরমপুর সদর হাসপাতালে এসেছেন। ভর্তি করানো হয়েছে। ওসুধ কিনতে বেরোলেন ভাইপো। কাছে-পিঠে ওষুধ না পেয়ে চললেন কল্পনার মোড়ে।

দোলের দ্বিতীয় দিন, বড়দোলের দিন ছিল সেটা। নাছোড় যুবকের দল চ্যাংদোলা করে পিচের ড্রাম বোঝাই রঙে তাঁকে চুবিয়ে তবে রেহাই দেয়। অশীতিপর ভবতোষ বলেন, ‘‘সে কী দশা! টাকা ভিজে একশা। দোকানদারের দয়ায় ওষুধ মেলে।’’

বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক, সত্তর ছুঁই-ছুঁই মনোজ চক্রবর্তী তখন নেহাতই কিশোর। বহরমপুর ভট্টাচার্য পাড়ার বর্ধিষ্ণু ঋষি মণ্ডলের তখন অর্থ, আধিপত্য, আভিজাত্য সব দিকেই বেজায় জাঁক। তাঁর বাড়ির দোলে নাড়াপোড়া থেকে হরেক রকম রংবাহারের খ্যাতি ছিল শহর জুড়ে। দোলের রাতে বিশ-পঁচিশ ফুট উঁচু নাড়াপোড়া হত। তারপর শুরু হত রং খেলা। মনোজ বলেন, ‘‘দ্বিতীয় দোলের দিন প্রিয় খেলা ছিল কুমকুম ছোড়া। সেই মোমের কুমকুম ফেটে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে বিচিত্র মানচিত্র ফুটে উঠত। ছেলেপিলের দল হইহই করত। তার পরে পাড়ার সবাই মিলে পাত পেড়ে খিচুড়ি, আলুর দম, চাটনি আর মিষ্টি। সেই দিন আর কই!’’

মনোজের মতোই স্মৃতিকাতর সাগরদিঘির বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি সুব্রত সাহা। তিনিও বলেন, ‘‘সেই কুমকুম দোল আজ আর কোথায়? দোল শেষ রাতে পাড়া জুড়ে পাতপেড়ে খিচুড়ির ভূরিভোজও আর নেই। পাচে লুচি, আলুর দম আর রসগোল্লা ছিল বাঁধাধরা।’’

দোলের দু’এক দিন আগে থেকে কিশোর-কিশোরীরা মোমের কুমকুম তৈরি করত। গলা মোম ছাঁচে ফেলে ভিতরটা ফাঁকা করে তাতে রঙ ঢুকিয়ে বেলুনের মতো করা হত। বালতি ভর্তি জলে রঙ বোঝাই কুমকুম পোক্ত হত। বিকেল-সন্ধ্যায় দূর থেকে পথচারীর গায়ে রঙ বোঝাই কুমকুম ছুড়ে দামাল ছেলেমেয়ের দল আত্মহারা।

শহরের উত্তর প্রান্তে কুঞ্জুঘাটায় জামাইয়ের রাজকীয় প্রাসাদে থাকতেন মহারাজা নন্দকুমার। সে কারণে অনেকেই সেটিকে মহারাজা নন্দকুমারের রাজপ্রাসাদ বলেই জানে। বাড়ির বর্তমান মালিক নন্দকুমারের আত্মীয় ভবানী রায়। তিনি বলেন, ‘‘দোলের আগের রাতে যাত্রাপালা হত। প্রজাদের জন্য ছিল লুচি, আলুর দম, বোঁদে। এখন যেমন পাড়ায়-পাড়ায় দু’দিন ধরে মালপোয়ার পশরা সাজিয়ে বসার চল হয়েছে!’’ বসন্তের রঙেরও মনখারাপ মন-ভাল আছে বইকী!

অন্য বিষয়গুলি:

Berhampore Dol Purnima Holi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE