Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পোড়া গন্ধ ভুলে ছন্দে ফিরছে মেডিক্যাল কলেজ

পোড়া গন্ধ এখনও লেপ্টে রয়েছে হাসপাতালের সেই ঘরে। এখনও ছোটাছুটি চলছে সিআইডি, ফরেন্সিক দল ও পুলিশের। শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড কি নেহাত দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে?

মেডিক্যাল কলেজে নবান্নের কর্তারা।— নিজস্ব চিত্র

মেডিক্যাল কলেজে নবান্নের কর্তারা।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

পোড়া গন্ধ এখনও লেপ্টে রয়েছে হাসপাতালের সেই ঘরে।

এখনও ছোটাছুটি চলছে সিআইডি, ফরেন্সিক দল ও পুলিশের।

শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড কি নেহাত দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? চাপানউতোর চলছে তা নিয়েও।এতকিছুর পরেও ছন্দে ফিরছে হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আশ্বাস দিচ্ছেন, আর ভয়ের কিছু নেই। নির্ভয়ে রোগীরা আসতে পারেন। ঘটনার পর থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপচে পড়া ভিড়ের চেনা ছবিটাই উধাও হয়ে গিয়েছিল। রবিবার রোগী ভর্তি ছিল সাকুল্যে দেড়শো। সোমবার থেকে ফের জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসতে শুরু করেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৩৩০ জন রোগী ভর্তি হন। বিভিন্ন মহকুমা ও গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ৭৫ জনের বেশি রোগী রেফার হয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অগ্নিকাণ্ডের পরে তার ছন্নছাড়া চেহারা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।

জেলার একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার অগ্নিকাণ্ডের জেরে আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ১৭ জন। যদিও আগুন লাগার কারণ জানতে রাজ্য সরকার তদন্ত ভার তুলে দিয়েছে সিআইডি-র হাতে। রবিবারের পরে সোমবারও সিআইডি কর্তাদের হাসপাতালে আনাগোনা ছিল। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বাস্থ্যভবনের কর্তা থেকে দমকল দফতরের কর্তা। ছিলেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তদন্তে বিভিন্ন কর্তা পৌঁছানোর আগেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের দখল নেয় পুলিশ।

গত তিন দিন ধরে রোগীর বাড়ির লোকজনের হাসপাতালে ঢোকার ব্যাপারে কড়া নজরদারি ছিল। এ দিন ওই কড়াকড়ি মাত্রা ছাড়ায়। আগে ভিজিটিং আওয়ার্সের সময়ে গেট খুলে দেওয়া হলে পিলপিল করে রোগীর বাড়ির লোকজন ঢুকে যেতেন। সেই সময়ে রোগী দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু শনিবারের ওই ঘটনার পরে এ দিন কার্ড ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এ দিনও সিআইডি দল থেকে স্বাস্থ্যভবনের প্রতিনিধিদের আসার জন্য সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে হাসপাতালের রোগী দেখার কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ ছিল চিকিৎসকদের উপরে। সেই মত তাঁরা দ্রুত হাসপাতাল ‘রাউন্ড’ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করে ফেলেন। কিন্তু শনিবারের ঘটনায় জখমদের ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না বলে এ দিনও অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তারা ব্যস্ত তদন্তকারী দলের কর্তাদের নিয়ে। ফলে হাসপাতালের প্রশাসনিক দিকে নজর দেওয়ার মতো সময় তাদের নেই। ফলে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে ডায়ালিসস ও এক্সরে বিভাগে রোগী নিয়ে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন রোগীর পরিবারের লোকজন।

রানিনগর থানার চরদুর্গাপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিত মণ্ডল মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে গত কয়েক দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনার পরে রবিবার তাঁর এক্সরে হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো কষ্ট করে তাকে নিচে নামিয়ে এক্সরে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এক্সরে না হওয়ায় তাঁকে ফের কষ্ট করে উপরে তিনতলায় নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। এ দিনও তাঁর এক্সরে হয়নি বলে মা সারথী মণ্ডলের অভিযোগ। রঘুনাথগঞ্জের হাসিনা বিবির অভিযোগ, ‘‘পড়ে গিয়ে কোমরে আঘাত নিয়ে দোতলায় বৃদ্ধা মা ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু শনিবারের পর থেকে কোনও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshisabad Medical college Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE