Advertisement
২৫ জানুয়ারি ২০২৫
Schools

সব কম্পিউটার নিয়েছে চোরে, ক্লাস বন্ধ স্কুলে, হেলদোল নেই শিক্ষা দফতরের

স্কুলের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কম্পিউটারের আর হদিস মেলেনি। আবার সরকার থেকে নতুন করে কম্পিউটারও দেওয়া হয়নি।

picture of students using computers.

বছরের পর বছর ধরে কম্পিউটার ক্লাস থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে শয়ে-শয়ে পড়ুয়া। প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

কম্পিউটার চুরি হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। সেই থেকে বন্ধ হয়ে আছে কম্পিউটার ক্লাসও। আর ক্লাস না থাকায় কম্পিউটার শিক্ষকেরা কার্যত করণিকে পরিণত হয়েছেন বলে অভিযোগ। কেউ কেউ আবার অন্য চাকরি পেয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে বছরের পর বছর ধরে কম্পিউটার ক্লাস থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে শয়ে-শয়ে পড়ুয়া। ওই সব স্কুলের কর্তৃপক্ষের আক্ষেপ, কর্তাদের একাধিক বার জানিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় তাঁরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ওই সমস্ত স্কুলগুলিতে আর কোনও দিন আদৌ কম্পিউটার ক্লাস শুরু হবে কি না তা-ও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউই।

২০০৪ সালে ‘রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান’ বা আরএমএসএ-র মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়টি স্কুলের পঠনপাঠনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা যাতে কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণে উপযুক্ত হয়ে ওঠে, তার জন্যই এই উদ্যোগ। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ অংশীদারিতে সমস্ত সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সর্ব সময়ের জন্য চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।

কিন্তু অনেক স্কুল থেকেই ‘রহস্যজনক’ ভাবে সেই সব কম্পিউটার চুরি হয়ে যায়। স্কুলের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কম্পিউটারের আর হদিস মেলেনি। আবার সরকার থেকে নতুন করে কম্পিউটারও দেওয়া হয়নি। ফলে ওই সব স্কুলে হাতে-কলমে কম্পিউটার শিক্ষা বন্ধ। কোনও কোনও স্কুল ‘থিওরি’ ক্লাস করালেও ‘প্রাকটিক্যাল’ করানো যায় না। পরে‘থিওরি’ ক্লাসও বন্ধ হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী স্কুলগুলির অন্যতম রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুল সূত্রে জানা যায়, তদের ২০টি কম্পিউটার দেওয়া হয়েছিল। এক জন শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ২০১২ নাগাদ তালা ভেঙে সব কম্পিউটার চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সমোৎপল রায় বলেন, “পুলিশে অভিযোগ জানানো ছা়ড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।” স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক কৃষ্ণকুমার মণ্ডল বলেন, “পরে স্কুল নিজেই একটা কম্পিউটার কেনে। সেটা দিয়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে পড়ুয়াদের ক্লাস নিতাম। তাও খারাপ হয়ে গিয়েছে। ফলে ক্লাস বন্ধ। আমাকে এখন অন্য কাজ করতে হয়।”

একই কথা জানান ভৈরবচন্দ্রপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষও। ওই স্কুল থেকেও খান বিশেক কম্পিউটার চুরি হয়েছে। তারা আর কম্পিউটার পায়নি। সেই থেকে ক্লাস বন্ধ। এক জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল। পুলিশে চাকরি পেয়ে তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে ‘থিওরি’ ক্লাসও করানো যাচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস হতাশ গলায় বলেন, “জানি না, আর কোনও দিন স্কুলে কম্পিউটার ক্লাস চালু করতে পারব কি না।”

এক রাতে সমস্ত কম্পিউটার চুরি হয়ে গিয়েছিল তারকনগর যমুনাসুন্দরী হাই স্কুলেওও। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ দাস বলেন, “ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। ছেলেমেয়েগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা সব রকম চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারিনি।”

নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে এমন আরও স্কুল আছে যেখানে একই কারণে কম্পিউটার ক্লাস বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু নদিয়া জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর গোটা বিষয়টি নিয়ে কার্যত উদাসীন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। তবে জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, “বিষয়টি অনেক পুরনো। ওই সব স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি পদ্ধতি মেনে আমায় জানান, সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Schools computer Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy