Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কার্ড পেয়েছেন অফিসার, বাদ নেই শিক্ষকও

ডিজিটাল রেশন কার্ড কাদের পাওয়ার কথা আর পেয়েছে কারা? সরকারি ভর্তুকির চাল-গম যাচ্ছে কোথায়? কার দই কোন নেপোয় মেরে যাচ্ছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। নিয়ম হল, রেশন দোকান বা কোনও জেরক্সের দোকান থেকে ফর্ম তুলে তাতে কেন কার্ড পেতে চান তার বহু শর্তের মধ্যে একটি উল্লেখ করে জমা করতে হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

রেশন কার্ড পাওয়ার অধিকার যে সকলের নেই, এটা না বুঝেই বহু মানুষ ইতিমধ্যে কার্ড চেয়ে খাদ্য দফতরে আবেদন করেছেন। সেখানে আবার এমনই ব্যবস্থা যে কার্ড পেয়ে গিয়েছেন পদস্থ পুলিশ কর্তা থেকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।

কিন্তু কোন জাদুতে?

নিয়ম হল, রেশন দোকান বা কোনও জেরক্সের দোকান থেকে ফর্ম তুলে তাতে কেন কার্ড পেতে চান তার বহু শর্তের মধ্যে একটি উল্লেখ করে জমা করতে হবে। সেই শর্তটা অনেক সময়ে উপভোক্তা ঠিক মতো দেখেনও না। রেশন ডিলারই কোনও একটা শর্ত উল্লেখ করে দেন। আর এর ফলেই বহু বিত্তবান লোকও পেয়ে যাচ্ছেন কার্ড।

মাস ছয়েক আগের কথা। কল্যাণী থানার এক অফিসার নিয়ম না জেনেই ডিজিটাল রেশন কার্ড চেয়ে খাদ্য দফতরে আবেদন করেন। তিনি কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। দিন কয়েক আগে মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের অফিসে যান কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক অধ্যাপক। ‘এ ৮’-এর বাসিন্দা ওই ব্যক্তি জানান, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বাজারে তিনি রক্ষাকবচ হিসেবেই চান ডিজিটাল রেশন কার্ড করে রাখতে। তিনি আবেদনের ফর্মে লিখেছেন, তাঁর পরিবারের এক জন ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম’ অর্থাৎ প্রতিবন্ধী। আর এক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন। এই সব তথ্য ঠিক নয়। কিন্তু কার্ড পেতে চান জেনে তাঁর আবেদনপত্রে রেশন ডিলার বা দফতরের কেউ ওই শর্তে ‘টিক’ দিয়েছেন। তাঁর কার্ড জেলা খাদ্য নিয়ামকের অফিসে চলে এসেছে। তা হাতে পাওয়া সময়ের অপেক্ষা। কালীগঞ্জের এক স্কুল শিক্ষকও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১-এর আওতায় কার্ড পেয়েছেন।

নজরদারি ছাড়া এ ভাবে কার্ড দেওয়ার ফলে দেখা যাচ্ছে, নদিয়া জেলার বিভিন্ন শহর যেমন কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, রানাঘাট, নবদ্বীপ, কল্যাণী সব জায়গাতেই বেশির ভাগ বাসিন্দা ডিজিটাল রেশন কার্ড পেয়েছেন। পুরসভা হওয়ার শর্তই হল, বেশির ভাগ মানুষকে কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে। শহরবাসীর একটা বড় অংশের বাসিন্দাই চাকরির সূত্রে গ্রাম ছেড়ে আসা লোকজন। বেশির ভাগ মানুষ আর্থিক ভাবে তুলনামূলক সচ্ছল। কর বাবদ পুরসভা কোটি-কোটি টাকা আয় করে। যাঁদের তিন কামরার ঘর, ঘরে একাধিক দামি আসবাব, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ইত্যাদি রয়েছে কিংবা আয়কর বা পেশাগত কর দেন তাঁদের কার্ড পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু অনেকেই দিব্যি কার্ড পেয়েছেন।

খাদ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, নদিয়ার পুর এলাকাগুলিতে গড়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ লোকই রেশন কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। রানাঘাটের ক্ষেত্রে শতকরা প্রায় ৮৫ শতাংশ, সদর শহর কৃষ্ণনগরে অন্তত ৮০ শতাংশ লোক কার্ড পেয়েছেন। খাদ্য দফতরের জেলা স্তরের এক আধিকারিক জানান, এ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বিশেষ শিবির করে ফের রেশন কার্ড বিলি হবে। কার্ড পাওয়া লোকের সংখ্যা এক ধাক্কায় আরও খানিকটা বাড়বে।

খাদ্য দফতরের কর্তারা কি চোখে কাপড় বেঁধে বসে আছেন?

জেলা দফতরের এক পরিদর্শকের দাবি, দ্রুত কার্ড দিতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার সময় থাকছে না। ফলে বহু লোক ভুল ভাবে কার্ড পেয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Ration Card Teacher Officer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE