Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Prochesta Scheme

‘প্রচেষ্টা’য় নাম বাদের আশঙ্কা

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি নাগাদ ওই প্রকল্পে অফলাইনে ফর্ম পূরণ শুরু হয়।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৫:৫২
Share: Save:

কাজ হারানো শ্রমিকদের এককালীন সাহায্যের জন্য এক হাজার টাকা করে দিতে রাজ্য সরকার প্রচেষ্টা প্রকল্প চালু করেছিল। কিন্তু অনলাইনে ফর্ম পূরণ এবং বেশ কিছু শর্তের গেরোয় তা এখন দুরাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলার অধিকাংশ শ্রমিকের কাছে।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি নাগাদ ওই প্রকল্পে অফলাইনে ফর্ম পূরণ শুরু হয়। পরে আবার বলা হয়, কেবলমাত্র অললাইনেই ওই প্রকল্পের জন্য আবেদন করা যাবে। এই মর্মে ৪ মে জেলায় নির্দেশিকাও আসে। বলা হয়, ১৫ মের মধ্যেই ওই আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই নানা সমস্যা তৈরি হয়। অনেকেই প্রচেষ্টা অ্যাপ খুলতেই পারছিলেন না। অনেকেই আবার আবেদনের সময় নিজের মোবাইল নম্বরে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাচ্ছিলেন না। এ নিয়ে জেলার এক বাম বিধায়ক রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন। দেখা গিয়েছে, ওই প্রকল্পে জেলায় অল্পই আবেদনপত্র জমা পড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার একেবারে শেষের দিকে, ১৩ মে পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন ব্লকে সাকুল্যে ৬০ হাজার ৫৭১ জন আবেদন করেছেন।

সমস্যার এখানেই শেষ হয়নি। কষ্টেসৃষ্টে অনেকে আবেদন করতে পারলেও নানা কারণে প্রায় ৯০ শতাংশ আবেদনকারীরই নাম বাদ পড়তে চলেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্য জেলা থেকে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য অনেক শ্রমিকেরই নাম বাদ পড়েছে। কারণ, প্রচেষ্টা প্রকল্পে টাকা দেওয়া হবে শুধু এ রাজ্যে বসবাসকারী শ্রমিকদেরই। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বক্তব্য, অনেকের স্মার্ট ফোন না থাকায় তাঁরা অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকা বন্ধু বা পরিচিতদের সাহায্য নিয়েছেন। কিন্তু এর ফলে বাছাইয়ের সময় সরকারি ‘সিস্টেমে’ তাঁদের আবেদনপত্র ‘অটো রিজেকশনে’র কোপে পড়েছে।

কল্যাণীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক শ্রমিক সুনীল পাহাড়ি বলেন, ‘‘আমার তো মোবাইলে ওটিপি-ই আসেনি। পরে সাইবার ক্যাফে-তে গেলাম। সেখানে ভিড় ছিল বলে আবেদন করতে পারলাম না। আশা ছিল টাকা পাব। কিন্তু এত ঝক্কি সামলে আর পেলাম না।’’

প্রযুক্তিগত সমস্যা ছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণে আবেদনকারীদের নাম বাদ পড়েছে। কারণ, প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, কোনও শ্রমিক কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে বা কোনও সামাজিক সুরক্ষার অধীনে থাকলে, তিনি প্রচেষ্টার টাকা পাবেন না। গ্রাম পঞ্চায়েত বা ব্লকের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ভাল করে যাচাই শুরু করতেই দেখা যাচ্ছে অধিকাংশের নামই চূড়ান্ত তালিকায় রাখা যাচ্ছে না। জেলার একাধিক ব্লক ইতিমধ্যেই আবেদনপত্রগুলি যাচাইয়ের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পাঠিয়ে দিয়েছে। চাপড়ার একটি পঞ্চায়েতের এক কর্মী বলেন, ‘‘যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, কোনও ভাবেই ১০ শতাংশের বেশি আবেদনকারীকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ, বেশির ভাগ আবেদনকারীরই হয় জব কার্ড রয়েছে বা তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত।’’

জেলার একাধিক ব্লকের বিডিও-রা জানান, পঞ্চায়েত স্তরেই যে ভাবে বাতিল হচ্ছে, তাতে এরপর শ্রম দফতরে পাঠালে আরও আবেদনকারীর নাম বাতিল হবে। শ্রম দফতরের এক পরিদর্শক বলেন, ‘‘আসলে রাজ্য সরকারের নির্দেশে গত বছর খানেক ধরে শিবির করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় লোকজনকে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার অধীনে আনা হয়েছে। ফলে পঞ্চায়েত বা ব্লক থেকে আবেদনপত্রগুলি দফতরে এলে দেখা যাবে এমন অনেকেই আবেদন করেছেন যাঁরা আসলে সামাজিক সুরক্ষা যোজনার অধীনে।’’

ফলে কার্যত দেখা যাচ্ছে, লকডাউনে জেলায় বহু শ্রমিক কাজ হারালেও, প্রচেষ্টার টাকা অধরাই থেকে যেতে পারে অধিকাংশের।

অন্য বিষয়গুলি:

Prochesta Scheme Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy