বাঁ দিকে বিমলেন্দু সিংহরায়, ডান দিকে হাসান আলি মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র।
দলীয় পদ দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বিমলেন্দু সিংহরায়। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের কাছে শুক্রবার এই মর্মে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন হাসান আলি মণ্ডল নামে এক প্রাক্তন সেনাকর্মী। শনিবার বিধায়কের পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে সেই হাসানকেই আটক করেছে পুলিশ। এসপি যদিও তাঁর কাছে হাসানের অভিযোগ জানানোর বিষয়টি মানতে চাননি। তবে বিধায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে যে হাসানকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন তিনি।
করিমপুর-২ ব্লকের বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান। তিনি প্রাক্তন সেনাকর্মী। তাঁর অভিযোগ, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম দিকে করিমপুর-২ ব্লকের দলীয় সভাপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন বিধায়ক বিমলেন্দু। শনিবার সকালে হাসান বলেন, ‘‘পরবর্তী কালে আলোচনা সাপেক্ষে ব্লক সভাপতি পদের জন্য আমি ৭ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হই। সেই মোতাবেক স্ত্রী এবং বৌমার গয়না বন্ধক দিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার ঋণ নিই। সেনা পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ৩ লক্ষ টাকা ধার করি। কিছু জমিজমা বিক্রি করে মোট ৭ লক্ষ টাকা বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়কে নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে তাঁর নিজস্ব চেম্বারে তুলে দিই।’’
হাসান আরও জানিয়েছিলেন, এর পর তৃণমূলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় নদিয়া উত্তরের তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ব্লক সভাপতির নাম। কিন্তু সেই তালিকায় ঠাঁই হয়নি তাঁর। হাসানের কথায়, ‘‘এটা জানতে পেরে আমি বিধায়ককে বলি টাকা ফেরত দিতে। কিন্তু আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও টাকা ফেরত না পেয়ে আমি শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের দ্বারস্থ হই।’’
বিমলেন্দুর ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসাবেই পরিচিত হাসান। তৃণমূল বিধায়কের নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যেত প্রাক্তন সেনাকর্মী হাসানকে। সেই হাসানই অভিযোগ করেছেন বিমলেন্দুর বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে বিধায়ক বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমাকে কালিমালিপ্ত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। মানুষ জানেন বিমলেন্দু সিংহরায়কে। আশা করি মানুষ এ সবের বিচার করবেন।’’
এ নিয়ে শনিবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের কাছে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন বিমলেন্দু। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে হাসানকে। হাসান বলেন, ‘‘বিধায়কের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগের পক্ষে কী কী তথ্যপ্রমাণ আছে তা পুলিশের কাছে জমা দিতে বলে হয়েছে। আমাকে বাড়ি থেকে পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে। কেন এনেছে আমি তা জানি না।’’ কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল যদিও বলেন, ‘‘বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। বিধায়ক যে অভিযোগ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসান আলিকে করিমপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’ যদিও হাসানের ছেলে মহম্মদ আফ্রিদির অভিযোগ, ‘‘আজ বিকেল ৪টে নাগাদ করিমপুর থানা থেকে পুলিশ এসে বাবাকে থানায় নিয়ে যায়। তাঁকে আটক করে রেখেছে।’’
এ নিয়ে নদিয়া উত্তরের বিজেপি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের কটাক্ষ, ‘‘গোটা নদিয়া জেলাতেই তৃণমূল দুর্নীতির পাঁকে ডুবে রয়েছে। জেলা থেকে এই নিয়ে পঞ্চম কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠল। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে বসে ঘুষ নেওয়া, এ তো মারাত্মক অভিযোগ! নিশ্চয়ই সরকার বিষয়টা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে।’’
হাসানের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কল্লোল খাঁ বলেন, ‘‘বিমলেন্দু সিংহরায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে তা সত্যি প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে ব্যবস্থা নেবে দল। কিন্তু তার আগে এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy