সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ফাইল চিত্র
ভোটে জেতার পর থেকে তিনি কার্যত উধাও। সংসদে তাঁর বক্তৃতা গোটা দেশে চর্চার বিষয়। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি, তাঁর ফ্যান ক্লাবও তৈরি হয়েছে। কিন্তু যেখান থেকে জিতে তিনি সাংসদ হয়েছেন তাঁর সেই সংসদীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষ এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরাও এলাকায় মহুয়া মৈত্রের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে বিরক্ত এবং বিব্রত।
দলেরই মহুয়া ঘনিষ্ট একটা অংশের সাফাই, সাংসদ তো দিল্লিতে থাকবেই। সেটা না-করলেই বরং সমালোচনা হবে। তাছাড়া সংসদে দল তাঁকে একটা বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু নদিয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশের মতে, একটা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের এলাকার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না সাংসদ।
তৃণমূলেরই মিমি কিংবা নুসরতরা সংসদে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের নিজেদের এলাকায় যাচ্ছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, জনসংযোগ করছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। কৃষ্ণনগরের পাশের লোকসভা কেন্দ্র রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারও তো সংসদে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি নিজের এলাকায় সময় দিচ্ছেন। অভিযোগ, শুধু মহুয়াকেই এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তৃণমূলের এক ব্লক নেতার কথায়, “এই রকম চললে দিল্লি সামলাতে গিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়া সামলানো মুশকিল হবে। এখন তো আমাদের মহুয়ার দর্শন পেতে ‘কোথায় খুঁজে পাব তাঁরে’ বলে বেড়াতে হচ্ছে।’’
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সরাসরি বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন মহুয়া। ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, নেতারা নয়, তাঁকে জেতাবেন বুথ স্তরের কর্মীরাই। তা নিয়ে ব্লক বা অঞ্চল স্তরের নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশও করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিন্তু বুথ নেতারাই মহুয়া মৈত্রর জন্য আপ্রাণ লড়েছিলেন। টানটান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরে জয়ের শেষ হাসি হেসেছেন মহুয়াই।
ফলাফল বের হওয়ার পর কয়েক মাস কাটতেই সেই নেতা-কর্মীরাই এখন অভিযোগ করছেন, দরকারে তাঁরা মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারছেন না। মহুয়া আবার কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। কিন্তু তাঁর দেখা পাওয়া তো দূরের কথা, কোনও সমস্যা হলে জরুরি প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিতে ফোনেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। তাঁরা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কানেও বিষয়টা আনতে শুরু করেছেন। জানিয়েছেন, সাংসদকে এলাকায় না-পেয়ে বিভিন্ন সংশাপত্র নিতে এসে হয়রান হতে হচ্ছে সাধারাণ মানুষকে। এই বিষয়ে তাঁরা মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না।
পলাশাপাড়ার বিধায়ক তাপস সাহা যেমন বলছেন, “সেই যে উনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লি গেলেন তার পর থেকে আর কোনও ভাবেই ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ফোন করলে ধরছেন না। সাধারণ মানুষের তো সমস্যা হচ্ছেই, আমাদেরও বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে।” নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ আবার আগেই দলের অভ্যন্তরে সরব হয়েছেন। এ দিনও তিনি বলেন, “বুথ স্তরের যে কর্মীদের উপরে ভরসা করে তিনি ভোটে জিতলেন সেই কর্মীরা তাঁকে পাচ্ছেন না। তাঁরা ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি আমি নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে না-চাইলেও জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “উনি সংসদে ব্যস্ত থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। ফিরলে পুরোদমে কর্মসূচি নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “সংসদ অধিবেশন চলাকালীন মহুয়া দিল্লিতে থাকলে যাতে এ দিকে সংগঠনিক সমস্যা না-হয় তার জন্য একটি শক্তিশালী জেলা কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে।” মহুয়া মৈত্রকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। ফলে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy