বাঁ দিকে থেকে: রিকি আলি, চতুর্থ, সহেলী মল্লিক, অষ্টম সিমলা আখতার, সপ্তম
লকডাউন হাঁফিয়ে উঠেছে ছেলেটি। কোনও রাখঢাক না রেখেই বলতে থাকে, ‘‘লকডাউনটা একেবারে জেলখানার মতো। জানি বাইরে বেরনো ঠিক নয়। কিন্তু ঘরবন্দি হয়ে থাকারও তো একটা সময় সীমা আছে। এ ভাবে... ’’ আরও অনেক কথাই হয়ত বলত, ফোনটা তার হাত থেকে কেড়ে নেন কেউ। ৭৬৭ পেয়ে হাই মাদ্রাসায় তৃতীয় হওয়া শাহিদ আখতার এখন স্থানীয় সেলিব্রিটি! ঘরে উঁকি দিচ্ছে পাড়ার লোক। বাইরে বন্ধুরা কেমন যেন জড়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কাছে ঘেঁষতে অস্বস্তি। এই অবস্থায় পরিজনদের চিন্তা নতুন বাঁক নিয়েছে, পাশ তো করল কিন্তু পড়বে কোথায়? এই ঘোর করোনা-আবহে বাইরে পড়তে পাঠানো কি ঠিক হবে? হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে সকাল থেকে জেরবার আখতার। লালগোলা রহমাতুল্লাহ হাই মাদ্রাসার ছাত্র শাহিদদের চিন্তার আরও একটা বড় কারণ, মা’র অসুস্থতা। রাতেই তাঁকে ভর্তি করতে হয়েছে তাঁকে। বাবা আবু বক্কর পেশায় রাজমিস্ত্রি, তিনি স্ত্রীর অসুস্থতা আর ছেলের সাফল্য— দুশ্চিন্তার মধ্যেও খুশির ঝিলিক, কেমন দোটানায় রয়েছেন যেন। শাহিদ তার কৃতিত্বের সবটুকু ঢেলে দিতে চায় স্কুলের শিক্ষকদের পায়ে। ইজাজউদ্দিন মাসুম, সেলিম ইউসুফ, ইসমাইল স্যার কাকে ছেড়ে কার কথা বলবে সে। বলছে, ‘‘স্যরেরা না থাকলে আমি পড়াশোনাই করতে পারতাম না। কখনও বাবার কাজে সাহায়্য কখনও বা অন্য কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আমাদের নিতান্তই নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার। স্যরেরা আর্থিক ভাবে সাহায্য না করলে, বই না দিলে পড়তেই পারতাম না।’’
ইসলামপুরের রানিনগর এক নম্বর ব্লকের বাসিন্দা নওশাদ আলি পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক। ছেলে রিকি আলি হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় ৭৬৫ নম্বর পেয়ে রাজ্যে চতুর্থ। ভাই সামিউল আলম নেট ঘেঁটে সে খবর দিলে চমকে উঠে সে বলেই ফেলে, ‘‘দাদা, ঠিক করে দেখ, এটা ঠিক বলছিস তো!’’ রানিনগর দুই নম্বর ব্লকের আমিরাবাদ হাইমাদ্রাসার এই পড়ুয়ার অঙ্ক বড় প্রিয়। জানিয়েছে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে চায় সে। তার পর যেন নিজেকেই সতর্ক করছে, “গ্রামে কাজ কোথায়, ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে চাই না। আমি এখানে থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’’ ওই বিদ্যালয়ের আর এক পড়ুয়া সিমলা আখতার ৭৫৮ নম্বর পেয়ে রাজ্যে সপ্তম।
রানিনগর ২ ব্লকের রামনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সহেলী মল্লিক ৭৫৬ পেয়ে রাজ্যে অষ্টম। সে খবর প্রধান শিক্ষক শামসুল হক ফোনে জানালে আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিল মেয়েটি। গল্পের বইয়ের পোকা সহেলীর প্রিয় বিষয়ও অঙ্ক। তারও ইচ্ছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার। বলছে, “লকডাউন চলছে। লকডাউন না উঠলে স্কুল ও যেতে পারব না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও হবে না। সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল।’’
শাহিদ আখতার, তৃতীয়
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy