Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

প্রত্যাখানেই খুন চেপে যায়, কবুল ইমানের

ফোন করে মেয়েদের সঙ্গে গল্প করাটা একপ্রকার নেশায় পরিণত হয়েছিল অ্যাসিড হামলার ঘটনায় ধৃত ইমান শেখের। তা নিয়ে বাড়িতে নিত্যদিন অশান্তিও লেগে থাকত।

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৫
Share: Save:

ফোন করে মেয়েদের সঙ্গে গল্প করাটা একপ্রকার নেশায় পরিণত হয়েছিল অ্যাসিড হামলার ঘটনায় ধৃত ইমান শেখের। তা নিয়ে বাড়িতে নিত্যদিন অশান্তিও লেগে থাকত। কিন্তু কোনও ভাবেই তাকে এ থেকে বিরত করা যায়নি। বরং সেই নেশাই তাকে মারাত্মক অপরাধের দিকে ঠেলে দিল। দিনভর ইমান শেখকে জেরা করে এমন তথ্যই উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে।

হাঁসখালির গাজনা গ্রামে সোমবার রাতে নিজের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী ও তার মা-র মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারা হয়। সেই ঘটনায় পুলিশ ছোটচুপড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর ইমান শেখকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ইমান তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।

কিন্তু কেন এমন কাজ করল ইমান?

তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরেই মোবাইলে অল্পবয়সি মেয়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলাটা তার কাছে নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। সে বিভিন্ন নম্বরে মিসড কল দিত। তার মধ্যে কোনও নম্বর মহিলাদের হলে, সে নানা ভাবে তাদের সঙ্গে ফোনে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা করতো। একই ভাবে তার সঙ্গে আলাপ হয় গাজনার ওই ছাত্রী ও তার এক বান্ধবীর সঙ্গে। এর বাইরেও সে ফোনে আরও সাত-আট জনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত। এদের প্রত্যেককেই সে আলাদা আলাদা নাম ও ঠিকানা বলত।

কিন্তু সম্প্রতি তিন সন্তানের বাবা ইমান শেখ এক দিন জল খাওয়ার ছুতো করে ওই ছাত্রীটির বাড়িতে চলে যায়। সে যে তার ফোনের বন্ধু ‘আনসার’, সেই পরিচয়ও দেয়। সে দিনই ছাত্রীটি ইমানকে প্রথম দেখে। এর পর এক দিন হঠাৎই ফোনে ছাত্রীটিকে প্রেম নিবেদন করে বসে। কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টে ছাত্রীটি তাকে দু’কথা শুনিয়ে দেয়। এ সবই জানা গিয়েছে পুলিশের তদন্তে।

এ দিকে, ফোন নম্বর দেখে ছাত্রীটি ধরে ফেলেছিল, ইমানই ‘তন্ময়’ নাম করে তার বান্ধবীকে ফোন করে। এর পর ওই ছাত্রী তার বান্ধবীকেও
ইমান শেখের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করে।

সে কথা জানিয়েছে ওই বান্ধবীও। তার কথায়, ‘‘আমরা ফোনে কথা বলতাম ঠিকই, কিন্তু ও যে একেবারে বাড়িতে চলে আসবে, ভাবতে পারিনি। এর পরই ওর ফোন ধরা বন্ধ করে দিই।’’

পুলিশ জানিয়েছে, তাতেই ছাত্রীটির উপরে মারাত্মক খেপে যায় ইমান। এবং ঠিক করে অপমানের প্রতিশোধ নেবে। সেই মতো ঘটনার দিন বারো আগে সে কৃষ্ণনগরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি ব্যাটারির দোকান থেকে সালফিউরিক অ্যাসিড কিনে নিয়ে আসে। লুকিয়ে রাখে বাড়ির কাছেই একটা গোপন জায়গায়। এরই মধ্যে সে এক রাতে, ছাত্রীটির বাড়ির আশেপাশে ঘুরে রীতিমতো ‘রেকি’ করে আসে। তার পরই ঠান্ডা মাথায় রাতের অন্ধকারে দরজার উপরের ফাঁক দিয়ে মা ও মেয়ের গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে সে। এর পর কৃষ্ণনগরের কাছে ঝিটকেপোতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসার নাম করে আত্মগোপন করে থাকে।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথম দিকে জেরা করার সময় সে কিছুতেই তার অপরাধ স্বীকার করতে চায়নি। কিন্তু পরের দিকে ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে গারদের ভিতর থেকে স্ত্রী-সন্তানদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। তার পরই তদন্তকারীদের কাছে সব কিছু স্বীকার করতে শুরু করে ইমান।

গোটা ঘটনায় রীতিমত হতবাক ইমানের স্ত্রী সেলিনা মণ্ডল। তিনি বলেন, “আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। অভাবের সংসার। তার উপরে কাড়ি কাড়ি টাকা ফোনের পিছনে খরচ করে দিনরাত কাদের সঙ্গে গল্প করত। প্রথম দিকে না বুঝেই বারণ করতাম। পরে ধরতে পারি ব্যাপারটা। প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয়নি। এই নিয়ে বাড়িতে কত অশান্তি হয়েছে।”

এই ঘটনায় পুলিশ অ্যাসিড বিক্রেতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে। রবিবার ইমান শেখকে রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। কলকাতার এনআরএস-এ এখনও ভর্তি রয়েছে ওই ছাত্রী।

অন্য বিষয়গুলি:

murder Refusal Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE