Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আবার তারা এসেছে ফিরিয়া

বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে ভোট-বাজারে ক্রমে সেই ছড়া-সংস্কৃতির অবলুপ্তি ঘটে। একুশ শতকে পা দেওয়ার পরে সেই ছড়া-যুদ্ধের দৃশ্যের কথা মনে করতে পারেন না বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৫০
Share: Save:

সে এক সময় ছিল! ভোট এলেই দলের ‘শিল্পী-কর্মী’দের কদর বাড়ত। তাঁদের ডাক পড়ত ছড়া লেখার জন্য। সেই ‘শিল্পী-কর্মী’রাও রং, তুলি ও চুনের বালতি হাতে বেরিয়ে পড়তেন রাস্তায়। ফাঁকা দেওয়াল দেখলেই প্রথমে চুনকাম করে দেওয়াল ‘দখল’ করা হত। দুধসাদা সেই দেওয়ালে লেখা হত নানা ছড়া। পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে চলত ছড়া-যুদ্ধ।

বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে ভোট-বাজারে ক্রমে সেই ছড়া-সংস্কৃতির অবলুপ্তি ঘটে। একুশ শতকে পা দেওয়ার পরে সেই ছড়া-যুদ্ধের দৃশ্যের কথা মনে করতে পারেন না বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। শেষ কবে দেওয়াল জুড়ে ভোটের ছড়া দেখেছেন, মনে করতে পারেন না গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক গিরিধারী সাহাও। তাঁরা দু’ জনেই বলছেন, ‘‘তবে এ বার ফের সে এসেছে ফিরিয়া। লোকসভা ভোটের হাত ধরে দেওয়ালে দেওয়ালে চোখে পড়ছে ছড়া-সংস্কৃতি।’’

কয়েক দশক আগের কথা। তখন বাম রাজনীতিতে উত্তাল রাজ্য। কংগ্রেসও কম যায় না। ভোটের বাজারে ইন্দিরা কংগ্রসের সঙ্গে জোট বেঁধেছে সিপিআই। ইন্দিরা কংগ্রেসের সে বার নির্বাচনী প্রতীক ‘গাই বাছুর’। সেই প্রতীকই সে বার সিপিএমের ভোটযুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে উঠে। সিপিএমের ক্যাডাররা নানা ছড়ায় দেওয়াল রাঙিয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে চায়। গিরিধারী সাহা বলেন, ‘‘দেওয়ালে লেখা হল—, ‘দিল্লি থেকে এল গাই, বাছুর হল সিপিআই।’ ছড়ার আক্রমণ শানাতে কংগ্রেসও পিছিয়ে ছিল না।

মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দেওয়াল ভরাতাম ‘উপরে ভাড়া, নীচে ভাড়া, মধ্যে জ্যোতি সর্বহারা’ জাতীয় ছড়ায়।’’ ওই ছড়ার ব্যাখ্যা দেন মনোজ চক্রবর্তী নিজেই। তিন তলা বাড়ির দোতলায় বাস করতেন জ্যোতি বসু। তিন তলা ও এক তলা ভাড়া দিয়েছিলেন ‘সর্বহারা’ নেতা। ব্যঙ্গের সেই হুল ফোটানো ছড়া আবার এ বার ফিরে এসেছে। কোনও দেওয়ালে সিপিএমের কর্মীরা এ বার লিখেছে, ‘‘পরিবর্তনের এ কী মজা! শিল্প এখন তেলেভাজা!’’ কিংবা, ‘‘শালবনি থেকে কামদুনি, মা বোনেদের কান্না শুনি!’’ কোনও দেওয়লে লিখেছে, ‘‘যাদের মাথায় দিদির হাত, তারাই খায় জেলের ভাত।’’

কোথাও কংগ্রেসের লোকজন লিখেছেন, ‘‘কালীঘাটে টালির চালা, ওই চোরদের পাঠশালা!’’ শাসক দল তৃণমূলই বা পিছিয়ে থাকে কেন! বহরমপুর, জলঙ্গি ও ফরাক্কা-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে রয়েছে, ‘‘নতুন বাড়িতে দেব অঞ্জলি, দিদি দিয়েছে গীতাঞ্জলি।’’ অর্থাৎ গরিবের জন্য গীতাঞ্জলি প্রকল্পের বাড়ি।’’

সিপিএমের প্রৌঢ় এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর আমলে বামেরাই প্রথম রাজনৈতিক ছড়া লিখতে শুরু করে। দেখাদেখি কংগ্রেসও পাল্টা ছড়ার আমদানি করে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE